সার্জারী ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক মহর্ষি সুশ্রুত।

susruta

হিপো ক্রেটিসকে চিকিৎসা শাস্ত্রের জনক বলা হয়, কিন্ত্র এর প্রায় দেড়শত বছর আগে তথা খ্রী.পূ.ষষ্ঠ শতকে সুশ্রুতের বিচরণ এবং তাঁর গ্রন্থ সুশ্রুত সংহিতাও হিপোক্রেটিসের আগের রচনা। গঙ্গা নদীর তীরে বেনারস ভারতের প্রাচীন নগরী, এটা পরবর্তীতে বৌদ্ধ ধর্ম এবং আয়ুর্বেদের পীঠস্থান। ভারতের সুশ্রুতের অনুসারীদের বলা হতো সৌশ্রুত, এদের অন্ততঃ ছয় বছর পড়াশুনা করতে হতো এবং তারপরে ট্রেনিং শুরুর আগে তাদেরকে রোগীর চিকিৎসা বিষয়ে শপথ নিতে হতো, হিপোক্রেটিসের শপথের সঙ্গে যার সাজুয্য খুঁজে পাওয়া যায়। এসব ঘটনা আজ থেকে অন্ততঃ ছাব্বিশ শত বছর আগের। সুশ্রুত সংহিতা তাঁর সময়ের সব চাইতে প্রাগ্রসর সার্জিকেল গ্রন্থ। সুশ্রুত সংহিতায় বর্ণিত বহু অধ্যায় বর্তমান যুগেও প্রাসঙ্গিক। এ সংহিতায় শুধু শল্য চিকিৎসা নয় , বরং এতে রয়েছে স্ত্রী রোগ বিদ্যার এবং মেডিসিন বিদ্যার নানা বিষয়। সুশ্রুত মনে করতেন একজন পরিপূর্ণ চিকিৎসকের মেডিসিন ও সার্জারীর উভয় ক্ষেত্রের জ্ঞান আবশ্যক, অন্যথায় চিকিৎসক হয়ে উঠবে “এক পাখাওয়ালা পাখির মতো”। তাঁর মতে, নিজের ক্ষেত্রে ভালো চিকিৎসক হতে চাইলে অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় ও ক্ষেত্র সমূহও তাকে ভালো জানতে হবে।


হরিদ্বারের ‘পতঞ্জলি যোগপীঠ’ ইনষ্টিটিউটে প্রাচীন শল্যবিদ সুশ্রুতের যে মূর্ত্তি আছে তার পার্শ্বস্থিত একটি শিলালিপিতে খ্রী পূ. ১৫০০ অব্দকে তাঁর জীবৎকাল হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে, তাঁকে ভারতীয় ‘শল্য চিকিৎসার জনক’ এবং সুশ্রুত সংহিতাকে ‘চিকিৎসা বিজ্ঞানের শল্য চিকিৎসার সর্বোৎকৃষ্ট এবং বিরল গ্রন্থ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুশ্রুতকে (মানে খুব বিখ্যাত) এই গ্রন্থের রচয়িতা বলে মনে করা হয়। সুশ্রুত কেরেলা’র লোক ছিলেন, তবে তাঁর কায্যক্রম ছিল বেনারস ভিত্তিক। কারও কারও মতে তাঁর কর্মকাল ছিল খৃঃ পূঃ ৬ষ্ঠ শতকের ঘটনা। ৪র্থ বা ৫ম খ্রীষ্টিয় শতকে আবিষ্কৃত ‘বাওয়ার পান্ডুলিপিতে সুশ্রুতের নামের উল্লেখ পাওয়া যায়, যেখানে তাঁকে হিমালয়ে বসবাসরত দশজন অন্যতম ঋষির একজন হিসেবে বর্ণনা করা হয়। পরবর্তীতে ঋষি বিশ্বমিত্রের পুত্র কিংবা ধন্বন্তরীর বংশধর উল্লেখে তাঁকে পৌরাণিক ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়। ধন্বন্তরী হলেন হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে দেবতাদের চিকিৎসক।
রাও (২০০৫) এর ধারণা মতে বৃদ্ধ সুশ্রুত রচিত সুশ্রুত সংহিতা নামক আদি গ্রন্থের স্তরটিকে পরবর্তীতে খ্রিস্টিয় প্রথম শতাব্দীতে অন্য সুশ্রুত এসে সম্পাদনা করেন এবং এরও পরের সংযুক্তি ও সম্পাদনা ঘটে নাগার্জুন কর্তৃক যা সুশ্রুত সংহিতার ধারাভাষ্যের প্রথম রচয়িতা দলহন (১২০০ খ্রী.) সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। দলহনকৃত এই সংস্করণ আজো আমাদের হাতে বিদ্যমান।

Sushruta Surgical instruments

সুশ্রুত সংহিতা হচ্ছে ভারতের সবচেয়ে পুরাতন চিকিৎসা গ্রন্থ যা শল্যবিদ্যা ও প্রসুতি বিদ্যার বাস্তব সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে লেখা। সুশ্রুত এতে মৃত মানুষের অঙ্গ ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে এবং ব্যাপক জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে মানব শরীরের গঠন প্রণালী বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন।
শল্যচিকিৎসা শব্দটা এসেছেÑ শল্য বা তীর থেকে। মূলতঃ শত্রুর তীর অর্থে; যেহেতু তৎকালে মুখ্য আঘাতগুলো মূলতঃ যুদ্ধজনিত ছিল, আর তা শল্য বা তীর থেকে প্রাপ্ত হতো সেহেতু এই নাম। সুশ্রুত গুরুত্ব আরোপ পূর্বক বলছেন যে, শরীরের কোন মুখ্য বা গুরুত্বপূর্ণ অংশে যদি তীর আঘাত করে তখন তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে।
খ্রী.পূ. ৮০০ সাল থেকেই প্রাচীন ভারতে সার্জারী বা শল্যবিদ্যার প্রসার ও বিকাশ ঘটেছে। বিশেষতঃ প্লাস্টিক সার্জারী, চোখের ক্যাটারেক্ট অপারেশন ও দাঁতের সার্জারীতে। রাজায় রাজায় যুদ্ধজনিত বর্ণনাতীত শারীরিক জখম এবং সামাজিক প্রয়োজন ও প্রণোদনাÑ এর বিকাশের দু’টো মুল কারণ। অন্যূন আড়াই হাজার বছর আগে প্রাচীন নগরী কাশী তথা বর্তমান বারাণসীতে বসবাসরত মেডিক্যাল থিওলজিয়ান তথা চিকিৎসা বিষয়ক তাত্ত্বিক এবং প্র্যাকটিসিয়ান সুশ্রুত তাঁর রচিত ‘সুশ্রুত সংহিতা’য় অন্ততঃ সার্জারীর সাতটি বিভাগ উল্লেখ করেন। কেটে বাদ দেওয়া (এক্সিশন), কোন একটা অংশকে দাগ এ পরিণত করা (স্কারিফিকেশন), ছিদ্র করে দেয়া (পাংচারিং), একটা অঙ্গে ঢুকে পরখ করে দেখা (এক্সপ্লোরেশন), টেনে বের কর ফেলে দেয়া (এক্সট্রেকশন), একটি অংশ খালি করা পরিষ্কার করা (ইভাকুয়েশন), এবং সেলাই করা (সিউচারিং)। এই গ্রন্থে আরো রয়েছে রাইনোপ্লাস্টি নামক নাকের অপরাশেন, অপথেলমোলজিক্যাল যেমন ক্যাটেরেক্ট অপারেশন এর মতো বিষয়।


সার্জারীকে তৎকালে বলা হতো শস্ত্রকর্ম, এবং এটা ছিল আয়ুর্ব্বেদের আটটি শাখার একটি। সুশ্রুত সার্জারীতে খুব পরদর্শী ছিলেন এবং এই বিষয়টিকে একটা আর্টে পরিণত করেছিলেন। রাইনোপ্লাস্টি তথা প্লাস্টিক সার্জারীর প্রথম ধারণা তাঁরই অবদান। তৎকালে যুদ্ধে এবং সামাজিক শাস্তি বিধানে নাক কাটার ঘটনায় জনসমক্ষে যে বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হতো তা থেকে এই রাইনোপ্লাস্টির উৎপত্তি। আজকালকার যুগেও এই ‘নাক কাটা গেছে’ বা ‘নাক খত দেওয়া’ ইত্যাদি কথা প্রচলিত আছে। এছাড়া ক্যাটার‌্যাক্ট বা চোখে মোতি হলে তা ফেলে দেয়াও তাঁর আবিস্কৃত। আজকের দিনের মতো হাজার হাজার বছর আগেই তিনি প্রতিটি অপরারেশন প্রক্রিয়ায় তাঁর অভিজ্ঞতালব্ধ ও সৃষ্ঠ ধাপগুলো মেনে সুশৃঙ্খলভাবে তা সম্পন্ন করতেন। 

স্বভাবতঃই তাঁর অপারেশনের সাফল্যের হার বেশ উঁচু ছিল এবং তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর রোগীরা ছিল দেশ ও বিদেশ উভয় স্থলের।
আদি শুশ্রুত সংহিতা সংস্কৃত ভাষায় লিখা, এবং রচনার পর বহু শতাব্দী ভর সংরক্ষিত অবস্থায় রাখার কারণে এতে স্থিত বিশাল জ্ঞানভা-ার ব্যাপক ভাবে প্রচারিত হতে পারেনি। পরে এই মূল গ্রন্থ খোয়া যায়। এবং বর্তমানের সুশ্রুত সংহিতা বৌদ্ধ পন্ডিত ও গবেষক বসুবন্ধু’র (৩৫০Ñ৩৬০ খ্রী.) পুনর্লিখিত রূপ। অষ্টম শতাব্দীতে বাগদাদের খলিফা মনসুরের(৭৫৩Ñ৭৭৪) নির্দেশে এটা “কিতাবÑ শ শুন ÑএÑহিন্দ” এবং “কিতাব ই সশ্রুদ” নামে অনুদিত হয়। ৪৫০ খ্রীষ্টাব্দের দিকে আরণ্য বৃক্ষের (ভূর্য) বাকলে লিখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল ‘বাওয়ার পান্ডুলিপি’ পূর্ব তুর্কীস্থানের কুছার অঞ্চলে আবিষ্কৃত হয় যা প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসা সম্পর্কিত, এই মূল্যবান দলিল বর্তমানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরীতে গচ্ছিত আছে।
শল্যবিদ্যার এই অনবদ্য গ্রন্থে বিধৃত অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন নির্ভুল বিশদ বর্ণনা অন্তরে গভীর ছাপ ফেলে। এই গ্রন্থে ১৮৪ টি অধ্যায়, আঘাত এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্ঠ নানা রোগের এবং মানসিক ও অন্যান্য রোগ সহ ১১২০টি অবস্থার বর্ণনা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে, ৭০০ঔষধি বৃক্ষের পরিচয় ও উপকারিতা, ৬৪টি খনিজ দ্রব্য থেকে তৈরী ঔষধ, ৫৭ টি প্রাণী উৎস থেকে আহরিত ও প্রস্তুতকৃত ঔষধ। শুশ্রুত এ সংহিতায় তৎকালে ব্যবহৃত ১২০টি সার্জিকেল যন্ত্রপাতির বর্ণনা দেন। তিনি ৩০০টি সার্জিকেল কার্যপ্রণালীর এবং আটটি বিভাগে মানুষের সার্জারীকে শ্রেণীবদ্ধ করেন। শুশ্রুত সংহিতায় অনেকগুলো অধ্যায় রয়েছে সার্জনদের প্রশিক্ষণ ও প্র্যাকটিস বা চর্চার জন্য। এই মূলতঃ শল্য চিকিৎসা গ্রন্থে কিভাবে সার্জিকেল ইন্সিশন দেয়া হবে তথা পরিকল্পিত ভাবে কাটতে হবে, পেটের পানি কিভাবে ফেলতে হবে, দাঁত ফেলা, কোন অংশ কেটে বাদ দেয়া, ক্ষার বা উত্তাপের মাধ্যমে একটা অংশ দাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়া (জীবাণু মুক্ত করা), পুঁজ বা পেটের পানি টেনে বের করার যন্ত্র, প্রস্রাব আসার পথের সংকোচনকে বিস্ফারিতকরণ বা ডাইলেটেশনের মাধ্যমে নিরাময় করা, হার্নিয়ার অপারেশন, ভ্যাসিকিউলোলিথটমি,অর্শ ভগন্দর, পেটের শল্য চিকিৎসা যথা পেট কেটে ভেতরের অন্ত্র প্যাঁচ খাওয়া, অন্ত্র ছিদ্র হয়ে যাওয়া, বা আকস্মিক আঘাতে পেটের ভেতরের নানা প্রত্যঙ্গ বেরিয়ে আসা ইত্যাদির সুচারু ব্যবস্থাপনা রয়েছে। একারনেচট্ (অপশবৎহবপযঃ) এর পর্যবেক্ষণ মতে ‘মধ্যযুগে ইটালীতে বিকশিত হওয়া প্লাস্টিক সার্জরী ভারতীয় আদি প্লাস্টিক সার্জারীর সরাসরি উত্তরসূরী’। সুশ্রুত বর্ণিত কাটা নাক (রাইনোপ্লাস্টি) এর প্লাস্টিক সার্জারীর চমৎকার কৃৎকৌশলের বিস্তৃত বর্ণনা এখানে স্থান সংকুলানের কারণে দেয়া অসম্ভব।


এই সংহিতার ১ম পুস্তক সূত্রস্থানম এর ১৬তম অধ্যায়ে কানের অটোপ্লাস্টি ও গলার লেরিঙ্গোপ্লাস্টি’র বর্ণনা রয়েছে। আজকের মতো তৎকালেও কান ছিদ্র করার রীতি প্রচলিত ছিল এবং ভারী কানের দুলে কানের লতি ছিঁড়ে যেতো। তার জন্য শুশ্রুত কানের লতির ১৫ ধরণের প্লাস্টিক সার্জারীর বর্ণনা দেন। তিনি মুখম-ল থেকে চামড়া নিয়ে কেটে যাওয়া কানের লতি মেরামতের অপারেশন চালু করেছিলেন এর নাম দিয়েছিলেনÑকর্ণবন্ধ এবং মাঝে মধ্যে এর ড্রেসিং ও নানা মলম কিভাবে তৈরী করা হবে এবং লাগানো হবে তিনি তারও বিস্তৃত বর্ণনা দেন। শুশ্রুত সংহিতায় ক্যাটেরেক্ট এর শল্য চিকিৎসার উল্লেখ রয়েছে। এটা হচ্ছে প্রথম সহস্রাব্দের প্রথম দিকের শতাব্দীগুলোতে উল্লেখিত এবং ‘জবামুখী’ নামে স্থানীয় একটি যন্ত্র এই অপারেশনে ব্যবহৃত হতো, যা দেখতে একটি বাঁকা সুঁই এর মতো যা দিয়ে চোখের ভেতর থেকে অস্বচ্ছ লেন্সটিকে বের করে আনা হতো। এরপরে ঈষদুষ্ণ ঘি দিয়ে চোখ ব্যান্ডেজ করে দেয়া হতো।


সুশ্রুত সংহিতার ‘পূর্বতন্ত্র’ ও ‘উত্তরতন্ত্র’ নামক দু’টি অংশ আছে। এ দুটি বিভাগ শল্য এবং শলক্য বাদ দিয়ে মেডিসিন, শিশুরোগ, বার্ধক্যজনিত রোগ, নাক কান গলা, বিষক্রিয়া, মানসিক রোগ যৌন শক্তি বর্দ্ধক (আফ্রোডিজিয়াক) ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে। পূর্বতন্ত্র আয়ুর্ব্বেদের চারটি শাখায় বিধৃত রয়েছে। এটা পাঁচটি গ্রন্থে এবং ১২০ টি অধ্যায়ে বর্ণিত। (উল্লেখ্য অগ্নিবেশতন্ত্র যা ‘চরক সংহিতা’ রূপে সমধিক পরিচিত এবং ভাগবতের ‘অষ্টাঙ্গ হৃদয়ম’ও ১২০ অধ্যায়ে বিভক্ত।) এই পাঁচটি গ্রন্থ হচ্ছে  সূত্র স্থান (স্থান শব্দের অর্থ গ্রন্থ), নিদান স্থান (রোগের কারণসমূহ, লক্ষণ, এতে বর্ণিত), শরীর স্থান (ভ্রুণ থেকে শুরু করে শরীরের এনাটমি), কল্প স্থান ও চিকিৎসা স্থান।


এটা বিষ্ময়কর যে তিনি তৎকালে আঘাত ও ক্ষতকে স্তর ও গোত্রভুক্ত করতে পেরেছিলেন। আঘাত ও ক্ষত ও তার ব্যবস্থাপনার যে বর্ণনা দিয়েছেন তা বিশাল ও বৈচিত্র্যধর্মী। শুশ্রুত বলেন যে, কোন অংশ কাটা গেলে তা টেনে জোড়া দিয়ে সেখানে সেলাই দিলে কাটা অংশের ঘা দ্রুত ও ভালো শুকায়। তিনি এতে রক্তস্রাব নিরোধী ক্কাথ প্রয়োগে এবং বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য বা তাপ প্রয়োগের কথাও উল্লেখ করেন, শেষোক্ত ব্যবস্থাগুলো জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করেছে যদিও জীবাণুর সংক্রমণের ধারণা সম্ভবতঃ তখনো ছিলনা। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তিনি দেখেছিলেন যে এসবের প্রয়োগে ক্ষত দ্রত শুকায়। 

শল্য চিকিৎসা’র নানা ব্যাপারগুলো যুদ্ধাহতদের চিকিৎসার সময়ে যে উন্নতি লাভ করেছিল সেকথা বলাই বাহুল্য। শুশ্রুত কয়েক হাজার বছর পূর্বেই বেশ পদ্ধতিগতভাবে স্তর রকমফের মাফিক ও পর্যায়ক্রম মেনে তদনুসারে বিন্যাসপূর্বক বলছেন যে, কোন আঘাতে শরীরের যে কোন একটি বা ততোধিক অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় চামড়া, মাংস, রক্তের শিরা উপশিরা, পেশীতন্তু জনিত শক্তি (মনে হয় তিনি এখানে নার্ভ বা স্নায়ুতন্ত্রকে নির্দেশ করেছেন, আমরা জানি  স্নায়ুতন্ত্র কাটা গেলে শরীরের সেই অংশ নাড়াচাড়া বা শক্তিহীন হয়ে পড়ে), হাড়, অস্থিগ্রন্থি, বুক পেট শরীর অভ্যন্তরে স্থিত নানা অঙ্গকে আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এটা বিস্ময়কর যে, সুশ্রুত এ্যানেসথেশিয়া বা রোগীকে অজ্ঞান করার ব্যবস্থার অগ্রদূত ছিলেন। ভয়ংকর ব্যথা থেকে রোগীকে মুক্তি দিতে ওয়াইন বা আঙ্গুর থেকে তৈরী সুরা পান করতে দিতেন, এবং ক্যানাবিস এর ধোঁয়ার ব্যবস্থা ছিল এনেসথেশিয়া হিসেবে। তবে পরবর্তী কালে নিদ্রাকর্ষক মাদক দ্রব্য পাওয়া যায় এমন উদ্ভিদ যথা ‘হেনবেইন’ বা বনজ সম্মোহিনী ও সঞ্জীবনী ইত্যাদিও অজ্ঞান করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন