মহেঞ্জোদারো ছিল প্রাচীন ভারতের সিন্ধু সভ্যতার বৃহত্তম নগর-বসতিগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি অধুনা পাকিস্তান রাষ্ট্রের সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলায় অবস্থিত। ২৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ নির্মিত এই শহরটি ছিল বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলির অন্যতম এবং প্রাচীন মিশর, মেসোপটেমিয়া ও ক্রিটের সভ্যতার সমসাময়িক। এই শহরের পুরাতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ বর্তমানে একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। এটিকে "একটি প্রাচীন সিন্ধু মহানগর" নামেও অভিহিত করা হয়।
মহেঞ্জোদারো খ্রিস্টপূর্ব ২৬ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। এটা প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার বৃহত্তম শহরগুলোর একটি, যেখানে আরেকটি প্রাগৈতিহাসিক শহর হরপ্পা গড়ে ওঠেছিল। সিন্ধু সভ্যতা বর্তমান পাকিস্তান ও উত্তর ভারতে ছিল, যার বিস্তৃতি ছিল ইরান সীমান্ত, দক্ষিনে ভারতের গুজরাট, উত্তরে বাক্ট্রিয়া পর্যন্ত, যার প্রধান প্রধান শহর ছিল হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো, লোথাল, কালিবাঙ্গান, ধলাবিরা এবং রাখিগাড়ি। এদের মধ্যে মহেঞ্জোদারো ঐ সময়ে পুরকৌশল ও নগর পরিকল্পনায় শ্রেষ্ঠ ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১৯ শতাব্দীতে সিন্ধু সভ্যতার প্রায় আকস্মিক পতন ঘটে এবং মহেঞ্জোদাড়ো পরিত্যক্ত হয়।
সম্ভবত মহেঞ্জোদারো ছিল সিন্ধু সভ্যতার একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র। উন্নতির মধ্যগগনে মহেঞ্জোদারো ছিল দক্ষিণ এশিয়ার উন্নততম নগরী। এই শহরের নগর পরিকল্পনা ও উন্নত প্রকৌশল ব্যবস্থাই প্রমাণ করে যে সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীদের নিকট এই শহর ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ।এই শহরের গণভবনগুলি উচ্চমানের সামাজিক সংগঠনের পরিচায়ক। স্যার মর্টিমার হুইলারের মতে, মহেঞ্জোদারোর তথাকথিত মহাশস্যাগারটিতে গ্রামাঞ্চল থেকে গরুর গাড়িতে আনীত শস্য জমা রাখা হত। শস্য শুকিয়ে রাখারও ব্যবস্থা ছিল এখানে। যদিও জোনাথান মার্ক কেনোয়ার এটিকে শস্যাগার বলতে রাজি হননি। তাঁর মতে এখানে শস্য জমা রাখার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি এটিকে "মহাকক্ষ" বা "গ্রেট হল" নামে অভিহিত করেন। সেখানকার মানুষ ফ্ল্যাশযুক্ত টয়লেট ব্যবহার করত। আর তাদের পানি সরবরাহ ও আবর্জনা নিষ্কাশনের এমন চমৎকার ব্যবস্থা ছিল, যা আধুনিক পাকিস্তানের অনেক শহরকেও টেক্কা দিতে পারে।
পাকিস্তানের সর্বোচ্চতম তাপমাত্রা ৫৩.৫° সেন্টিগ্রেড (১২৮.৩° ফারেনহাইট) ২০১০ সালের ২৬ মে তারিখে এখানেই নথিভুক্ত হয়। এই তাপমাত্রা শুধু পাকিস্তানেরই নয় সমগ্র এশিয়া মহাদেশের নির্ভরযোগ্যভাবে পরিমাপকৃত সর্বোচ্চতম তাপমাত্রা এবং বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।