কলির পাপ মোচনকারী মহামন্ত্রে রাধার অস্থিত্ব কতটুকু সত্য I

radha

পোস্টটি পড়ার আগে বলে রাখি পোস্টটি কাউকে ছোট করার জন্য নয় শুধু মাত্র সত্যকে জানার জন্য। যদি পোস্টটির দ্বারা কারো মনে কষ্ট দিই তবে আমায়  ক্ষমা করে দিয়েন।

মহামন্ত্র হল ১৬ শব্দের একটি মন্ত্র যা কলি-সন্তরণ উপনিষদে বর্ণিত, এবং যা ষোড়শ শতাব্দীর সময় থেকে চৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষণের মাধ্যমে ভক্তি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মন্ত্রটি পরম সত্ত্বার তিনটি সংস্কৃত নাম দ্বারা রচিত; "হরে," "কৃষ্ণ," এবং "রাম।
১৯৬০-এর দশক থেকে, মন্ত্রটি অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এবং তাঁর আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ দ্বারা ভারতের বাইরেও সুপরিচিতি লাভ করে (সাধারণত "দ্য হরে কৃষ্ণাস্" নামে খ্যাত)।
mahamantra

মহামন্ত্র
হরে রাম হরে রাম

রাম রাম হরে হরে

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে



নাম-ব্যুৎপত্তি অনুসারে, "হরে" শব্দটিকে ভগবান বিষ্ণুর অপর নাম "হরি"-র সম্বোধনসূচক পদ হিসাবে ব্যক্ত করা হয়েছে, যার অর্থ "যিনি জাগতিক মোহ মুক্ত করেন। আর রাম, কৃষ্ণ নাম দুইটিও ভগবান বিষ্ণুর অবতারের নাম তাই মহামন্ত্র জপ করার অর্থ ভগবান বিষ্ণুর বন্দনা করা 

কিন্তু আমরা গৌড়ীয় বৈষ্ণব তত্ত্ববিদ্যা অনুসারে গেয়ে যাচ্ছি আর অর্থ বুঝছি তার উল্টো। আমি এ উল্টো হওয়ার দোষ চৈতন্য মহাপ্রভু বা ইসকনকে দিতে পারি না কারণ ভগবান শ্রী কৃষ্ণ কে নিয়ে যত নষ্টামি সব চৈতন্য পূর্ব গৌড়ীয় বৈষ্ণবরা  ব্রহ্মবৈবর্ত পুরা তৈরীর মাধ্যমে করে গেছেন। এখন আমরা তা অনুসরণ করে যাচ্ছি আর বিধর্মীদের মুখে সত্য সনাতন এর খারাপ কথা শুনছি। ভগবান শ্রী কৃষ্ণের মাহাত্ম্যকে ধূলায় মিশিয়ে দিচ্ছে। একজন বিদেশী ইতিহাসবিদ উইলসন ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ সম্পর্কে লিখে গেছেন তার মতে, 

ইহা পুরাণগণের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ বলিয়াই বোধ হয়। ইহার রচনা প্রণালী আজিকালিকার ভট্টাচার্য্যদিগের রচনার মত। ইহাতে ষষ্ঠী মনসারও কথা আছে।

সর্বশেষে প্রচারিত হইলেও ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ বাঙ্গালার বৈষ্ণবধর্মের উপর অতিশয় আধিপত্য স্থাপন করিয়াছে। জয়দেবাদি বাঙ্গালী বৈষ্ণব কবিগণ, বাঙ্গালার জাতীয় সঙ্গীত, বাঙ্গালার যাত্রা মহোৎসবাদির মূল ব্রহ্মবৈবর্ত্তে।তবে ব্রহ্মবৈবর্ত্তকার কথিত একটা বড় মূল কথা বাঙ্গালার বৈষ্ণবেরা গ্রহণ করেন নাই, অন্ততঃ সেটা বাঙ্গালীর বৈষ্ণব ধর্মে তাদৃশ পরিস্ফুট হয় নাই- রাধিকা রায়ান পত্নী বলিয়া পরিচিতা, কিন্তু ব্রহ্মবৈবর্ত্তের মতে তিনি বিধি বিধানানুসারে কৃষ্ণের বিবাহিতা পত্নী। সেই বিবাহবৃত্তান্তটি সবিস্তারে বলিতেছি।
“একদা কৃষ্ণসহিত নন্দ বৃন্দাবনে গিয়াছিলেন। তথাকার ভাণ্ডীরবনে গোপগণকে চরাইতেছিলেন। সরোবরে স্বাদুজল তাহাদিগকে পান করাইলেন এবং পান করিলেন। এবং বালককে বক্ষে লইয়া বটমূলে বসিলেন। হে মুনে! তারপর মায়াতে শিশুশরীর ধারণকারী কৃষ্ণ অকস্মাৎ মায়ার দ্বারা আকাশ মেঘাচ্ছন্ন এবং কাননান্তর শ্যামল; ঝঞ্ঝাবাত, মেঘশব্দ, দারুণ বজ্রশব্দ, অবিরল বৃষ্টিধারা এবং বৃক্ষসকল কম্পমান হইয়া পতিতস্কন্ধ হইতেছে, দেখিয়া নন্দ ভয় পাইলেন। গোবৎস ছাড়িয়া কিরূপেই বা আপনার আশ্রমে যাই, যদি গৃহে না যাই, তবে এই বালকেরই বা কি হইবে, নন্দ এইরূপ বলিতেছেন, শ্রীহরি তখন কাঁদিতে লাগিলেন; মায়াভয়ে ভীতিযুক্ত হইয়া বাপের কন্ঠ ধারণ করিলেন। এই সময় রাধা কৃষ্ণের নিকট আসিয়া উপস্থিত হইলেন”।
রাধার অপূর্ব লাবণ্য দেখিয়া নন্দ বিস্মিত হইলেন, তিনি রাধাকে বলিলেন, “আমি গর্গমুখে জানিয়াছি, তুমি পদ্মার অধিক হরির প্রিয়া আর ইনি পরম নির্গুণ অচ্যুত মহাবিষ্ণু; তথাপি আমি মানব, বিষ্ণু মায়ায় মোহিত আছি। হে ভদ্রে! তোমার প্রাণনাথকে গ্রহণ কর; যথায় সুখী হও, যাও। পশ্চাৎ মনোরথ পূর্ণ করিয়া আমার পুত্র আমাকে দিও”।
এই বলিয়া নন্দ রাধাকে কৃষ্ণ সমর্পণ করিলেন। রাধাও কৃষ্ণকে কোলে করিয়া লইয়া গেলেন। দূরে গেলে রাধা রাসমণ্ডল স্মরণ করিলেন, তখন মনোহর বিহারভূমি সৃষ্টি হইল। কৃষ্ণ সেইখানে নীত হইলে কিশোরমূর্ত্তি ধারণ করিলেন। তিনি রাধাকে বলিলেন ‘যদি গোলকের কথা স্মরণ হয়, তবে যাহা স্বীকার করিয়াছি, তাহা পূর্ণ করিব’।
তাঁহারা এইরূপ প্রেমালাপে নিযুক্ত ছিলেন, এমন সময়ে ব্রহ্মা সেইখানে উপস্থিত হইলেন। তিনি রাধাকে অনেক স্তবস্তুতি করিলেন। পরিশেষে নিজে কন্যাকর্তা হইয়া, যথাহিহিত বেদবিধি অনুসারে রাধিকাকে কৃষ্ণে সম্প্রদান করিলেন। তাঁহাদিগকে বিবাহ-বন্ধনে বদ্ধ করিয়া তিনি অন্তর্হিত হইলেন। রায়ানের সঙ্গে রাধিকার যথাশাস্ত্র বিবাহ হইয়াছিল কিনা, যদি হইয়া থাকে, তবে পূর্বে কি পরে হইয়াছিল, তাহা ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণে পাইলাম না। রাধাকৃষ্ণের বিবাহের পর বিহার বর্নন। বলা বাহুল্য যে, ব্রহ্মবৈবর্ত্তের রাসলীলাও ঐরূপ।
যাহা হউক, পাঠক দেখিবেন যে, ব্রহ্মবৈবর্ত্তকার সম্পূর্ণ নতুন বৈষ্ণব ধর্ম সৃষ্ট করিয়াছেন। সে বৈষ্ণবধর্মের নামগন্ধ বিষ্ণু বা ভাগবত বা অন্য পুরাণে নাই। রাধাই এই নূতন বৈষ্ণব ধর্মের কেন্দ্রস্বরূপ। জয়দেব কবি গীতগোবিন্দ কাব্যে এই নূতন বৈষ্ণবধর্মাবলম্বন করিয়াই গোবিন্দগীতি রচনা করিয়াছেন। এই ধর্ম অবলম্বন করিয়াই শ্রীচৈতন্যদেব কান্তরসাশ্রিত অভিনব ভক্তিবাদ প্রচার করিয়াছেন। বলিতে গেলে সকল কবি, সকল ঋষি, সকল পুরাণ, সকল শাস্ত্রের অপেক্ষা ব্রহ্মবৈবর্ত্তকারই বাঙ্গালীর জীবনের উপর অধিকতর আধিপত্য বিস্তার করিয়াছেন”। (কৃষ্ণ চরিত্র, পৃঃ-১০০-১০৪)
এর থেকে বুঝা যায়, বৈষ্ণব গুরুদের সাথে এল বোষ্টমী। এল পরকীয়া প্রেমের ভজন তত্ত্ব। এইসব বৈষ্ণব গুরুরা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তাদের ভোগমুখী মনের কামনা-বাসনা চরিতার্থ করতে তাদের বিকৃত ভোগ সাধনার সমর্থনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নারীমাংস লোলুপ, কামার্ত পরকীয়া প্রেমের খল নায়ক রূপে প্রতিষ্ঠা করে রচনা করলেন নৌকা বিলাস, শ্রীরাধার মানভঞ্জন ইত্যাদি পালাকীর্তন, নাটক। এল জটিলা, কুটিলা, এল রায়ান পত্নী রাধার কাহিনী। বাংলার মানুষ শ্রীকৃষ্ণকে জানলো এইসব বৈষ্ণব গুরুদের দ্বারা, নাটক আর পালাকীর্তনের মাধ্যমে। তাই কৃষ্ণের সঙ্গে সঙ্গে রাধার ধারণাও মানুষের মনে দৃঢ়মূল হলো। কিন্তু ব্রহ্মবৈবর্ত্তকারের কপোল কল্পিত এই রাধা চরিত্রের সঙ্গে বা চৈতন্যোত্তর আদর্শভ্রষ্ট বৈষ্ণব গোস্বামীদের সৃষ্ট নাটক, পালাকীর্তনের এই রায়ানপত্নী রাধার সঙ্গে ঐতিহাসিক শ্রীকৃষ্ণের সম্পর্ক কোথায়? তাই ঐতিহাসিক শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে এই কাল্পনিক রাধা চরিত্রের কোন সম্পর্কই নেই আর থাকতে ও পারে না।


1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
নবীনতর পূর্বতন