চাণক্য প্রাচীন ভারতের কূটনৈতিক ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।চাণক্যের নীতিশাস্ত্রগুলো সর্বকালের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।
চাণক্য ছিলেন চণক মুনির পুত্র।তক্ষশিলায় তার জন্ম। বাল্যে পিতৃবিয়োগের পর মাতৃ স্নেহে লালিত,পালিত হন।
চাণক্য দেখতে তেমন সুন্দর ছিল না। কদাচিৎ দন্তরাজি উটপাঠিত করেছিলেন বলে জানা যায়।ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও একগুয়ে। একদিন গমনরত চাণক্যের পায়ে কুশ বিধেছিল। ক্রোধাবিষ্ট হয়ে তিনি কাশের মূল পর্যন্ত উত্তোলন করেছিলেন।
সেকালে তক্ষশিলা ছিল বিদ্যচর্চার প্রধান কেন্দ্র।চাণক্য গভীর অধ্যাবসায় সহকারে সেখানে বিদ্যার্জন করেন।
নানা শাস্ত্রে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে অর্থ উপার্জনের জন্য পাটলিপুত্রে যান।জনৈক নন্দবংশীয় রাজা কতৃক সভামধ্যে অপমানিত হওয়ায় তিনি পণ করেছিলেন যে নন্দবংশ ধ্বংস করবেন। কালক্রমে এ ব্যাপারে তিনি সাফল্যমন্ডিত হয়ে চন্দ্রগুপ্তকে সিংহাসনে বসিয়ে নিজে মন্ত্রী হন।
মস্কো থেকে প্রকাশিত আন্তোনোভা বোনগার্দ,লেভিন কতোভস্কির ভারতবর্ষের ইতিহাসে বলা হয়েছে বৌদ্ধ ও জৈন পুথিপত্রে বর্ণিত হয়েছে চন্দ্রগুপ্তের অল্প বয়সের কথা, তক্ষশিলায় তার পাঠ গ্রহণের বৃত্তান্ত এবং মনে করা হয়েছে যে সেখানেই তিনি তার হিতৈষি ও ভবিষ্যৎ উপদেষ্টা কৌটিল্য তথা চাণক্যের সাক্ষাৎ পান।
চাণক্য বিষ্ণুগুপ্ত তথা বিষ্ণুশর্মা এবং কৌটিল্য নামেও পরিচিত। রাজনীতি ও অর্থনীতিশাস্ত্রে তার প্রগাঢ় পান্ডিত্যের পরিচয় মেলে।আর তাকে তার প্রাচ্যের মাকিয়াভেলি বলা হয়।
চাণক্য নীতিদর্পন,বৃদ্ধ চাণক্য,চাণক্য নীতিশাস্ত্র,বোধিচাণক্য,লঘু চাণক্য ও চাণক্য রাজনীতি শাস্ত্র নামে একহাজার পাচশ সত্তরটি শ্লোক বিন্যস্ত নীতি বিষয়ক গ্রন্থগুলি তার রচনা বলে অনুমান করা হয়।
আজ থেকে ২০০ বছর আগে উইলিয়াম কেরীর অনুপ্রেরনায় শ্রীরামপুর মিশন থেকে লঘু চাণক্য জয় গোপাল তর্কালঙ্কার কৃত অনুবাদ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল।
চাণক্যের বহুখ্যাত গ্রন্থটি হল অর্থশাস্ত্র যা মৌর্যযুগের রাষ্ট্রকাঠামোর পরিচয় বহন করছে।অর্থশাস্ত্রের রচয়িতা কৌটিল্য মনে করতেন যে রাষ্ট্রের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হল সামাজিক বৈশম্যকে অর্থ্যাৎ চতুবর্ণভিত্তিক সমাজব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা।
বিশাখ দত্তের মুদ্রারাক্ষস নাটকে চাণক্য আজও অমর হয়ে আছেন।
পরবর্তী পোষ্টে চাণক্যের নীতিবাক্য গুলো পর্যায়ক্রমে আনার চেষ্টা করবো।