আমাদের গীতা কয়টি ? জেনে নিন I

এই প্রশ্নের উত্তরে সবাই একযোগে বলবেন, গীতা আমাদের ধর্মগ্রন্থ। তাহলে আমার প্রশ্ন আপনার কাছে, যে কোন গীতা? আপনি একটু বিরক্ত হয়ে হয়তো বলবেন, ভগবৎ গীতা। আমি আপনাকে বলবো, গীতা র অর্থ হলো ‘গান’, গীত থেকে গীতা। ষাট রকমের গীতার উল্লেখ আছে আমাদের পুরাণে, যেমন
গুরু গীতাঃ মহাদেব শিব ও পার্বতীর কথোপকথন এখানে রয়েছে। শিব ও পার্বতী নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন, যে একজন মানুষের অন্তরাত্মার জাগরণের জন্য সঠিক গুরুর প্রয়োজন, এবং সেই গুরুর মাহাত্ম্য। এর উল্লেখ স্কন্দ পুরাণে আছে।
অষ্টবক্র গীতাঃ এখানে রাজা জনক ও অষ্টবক্র ঋষির কথোপকথন রয়েছে, এখানে অদ্বৈত বেদান্তের ব্যাপারে বলা হয়েছে, মানুষের মধ্যের সম্পর্ক, আত্মশুদ্ধির বিষয়েও বলা রয়েছে। মহাভারতের বন পর্বে এর উল্লেখ আছে।
অভধুত গীতাঃ ঋষি দত্তাত্রেয় ও স্কন্দ বা দেবতা কার্তিকের মধ্যের কথোপকথন। জীবনের উপলব্ধির ব্যাপারে এখানে আলোচনা রয়েছে।
ভগবৎ গীতাঃ শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের কথোপকথন, যেটা সবথেকে জনপ্রিয়, যা জীবনের নানা সমস্যার সমাধানের কথা বলে থাকে।
অণু গীতাঃ  এটাও শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের মধ্যে কথোপকথন, যখন অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে অনুরোধ করেন, পুনরায় ভগবৎ গীতা শোনাতে, কারণ তিনি বেশিরভাগই ভুলে গেছেন।
ব্রহ্ম গীতাঃ ঋষি বশিষ্ট ও শ্রী রামের মধ্যে কথোপকথন। জীবনের নির্বাণের বিষয়, এবং ব্রাহ্মণের আচরণ কেমন হওয়া উচিত, এবং কিভাবে অন্তরাত্মার জাগরণ ঘটবে সেই বিষয়ে আলোচনা।
জনক গীতাঃ রাজা জনকের স্বগতোক্তি রয়েছে এখানে
প্রথম রাম গীতাঃ শ্রীরাম ও শ্রীলক্ষণের মধ্যে কথোপকথন, বিষয়, অদ্বৈত বেদান্ত এর বিভিন্ন দিক, যেখানে জীব, অভিদ্য, ঈশ্বর, মায়া, এসবের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
দ্বিতীয় রাম গীতাঃ শ্রীরাম ও হনুমানের মধ্যে কথোপকথন, যেখানে জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে জগত থেকে নিবৃত্তির নিবারণের বিষয় বর্ণিত।
ঋভু গীতাঃ ঋষি ঋভু ও তার শিষ্য নিদঘের মধ্যে কথোপকথন। শিব পুরাণের উপপুরাণ শিব রহস্য পুরাণের মূল আধার এটি।
সিদ্ধা গীতাঃ রাজা জনকের সামনে বিভিন্ন সিদ্ধ্য ঋষির জ্ঞানের বিস্তার, যেখানে মূলত অনন্তের মধ্যে নিজের আত্মার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ের আলোচনা রয়েছে।
উত্তরা গীতাঃ ভগবৎ গীতার পরবর্তী অংশ, যেটা ব্রাহ্মান্ড পুরাণে বর্ণিত আছে।
বক গীতাঃ দেবরাজ ইন্দ্র এবং ঋষি বকের মধ্যে জগতের নানা কষ্টের বিবরণ।
ভিক্ষু গীতাঃ যেখানে শ্রীকৃষ্ণ একজন লোভী ব্রাহ্মণের রূপে এসে উদ্ধব কে শিক্ষা দেন।
গোপী গীতাঃ যেখানে শ্রীকৃষ্ণের সাথে বিয়োগের সময় গোপিনীদের গান রয়েছে, যা ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণের একটা দৃষ্টান্ত বলা যায়।
উদ্ধব গীতাঃ রাজ হাঁস রূপী বিষ্ণু র, ব্রহ্মার তিন পুত্রের মধ্যে কথোপকথন, যা হংস গীতা বলেও পরিচিত।
এছাড়াও কপিলা গীতা, নহুষ গীতা, নারদ গীতা, পাণ্ডব গীতা, ঋষভ গীতা, শৌনক গীতা, শ্রুতি গীতা, ইত্যাদির উল্লেখ আছে। তাহলে কোনটা কে আমরা ধর্মগ্রন্থ বলবো? By : সোহম ব্যানার্জী
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন