রামায়ন নামক মহাকাব্য যে-শ্রীরামচন্দ্রের কাহিনি, যাঁকে পুরাণে বিষ্ণুর অবতার হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, সেই শ্রীরাম কোনও বাস্তব মানুষ ছিলেন কি না, সে বিষয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই।
এই বিষয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের চেষ্টাও চালানো হয়েছে। কেউ কেউ শ্রীরামচন্দ্রের ঐতিহাসিকতার পক্ষে মত দিয়েছেন, কেউ বলেছেন, রাম নিছকই কবিকল্পনা। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্টিফিক রিসার্চ অন ভেদাজ বা সংক্ষেপে আই-সার্ভ নামের সংস্থার গবেষণা রামের ঐতিহাসিক সত্যতা সম্পর্কিত ধোঁয়াশায় নতুন আলোকপাত করেছে।
আই-সার্ভ-এর সদর দফতর অবস্থিত হায়দরাবাদে। এঁদের কাজ হিন্দু পুরাণে বর্ণিত নানা চরিত্র ও ঘটনার সত্যতা নিরূপণ করা। এবং এঁরা দাবি করেন, সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হয় এঁদের গবেষণা। এঁরাই সম্প্রতি রামের বাস্তবতা বিষয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। এবং এঁদের বক্তব্য, এঁরা জানতে পেরেছেন, রামায়নে যে শ্রীরামের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে, তিনি ঐতিহাসিক চরিত্র। এমনকী, সংশ্লিষ্ট গবেষকরা দাবি করছেন, রামের জন্মসাল এবং তাঁর জীবনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী কোন সময়ে ঘটেছিল— সবটাই নিখুঁতভাবে নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা।
কীভাবে এলো এই সাফল্য? আই-সার্ভের গবেষকরা বলছেন, তাঁরা প্ল্যানেটোরিয়াম সফ্টওয়্যারের সাহায্যে গবেষণা চালিয়েছিলেন। এই সফ্টওয়্যারের কাজ হল, মহাকাশে বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা। নাসা এবং নেহেরু প্ল্যানেটোরিয়ামের মতো জোতির্বৈজ্ঞানিক সংস্থাও এই সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে থাকে। আই-সার্ভের গবেষকরা জানাচ্ছেন, রামায়নে বাল্মীকি শ্রীরামের জন্মের সময়ে আকাশে কোন নক্ষত্রের কী অবস্থান ছিল, তা নিখুঁতভাবে বর্ণনা করে গিয়েছেন। সেই তথ্যকে কাজে লাগিয়ে প্ল্যানেটোরিয়াম সফ্টওয়্যারের সাহায্যেই সম্ভব হয়েছে রামচন্দ্রের আবির্ভাবকাল নির্ধারণ করা।
আই-সার্ভের গবেষকরা বলছেন, ৫১১৪ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে ১০ জানুয়ারি বেলা ১২টা থেকে ১টার মধ্যে অযোধ্যায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। শুধু তাই নয়, রামায়নে বর্ণিত শ্রীরাম ও রাক্ষস খরের যুদ্ধ কোন সময়ে হয়েছিল, তা-ও নাকি তাঁরা নির্ভুলভাবে জানতে পেরেছেন। রামায়নে কথিত আছে, লক্ষণের হাতে শূর্পনখা নিগৃহীত হওয়ার পরে রাবণের ভাই খর আক্রমণ করেন রামকে। যুদ্ধে খরকে পরাজিত করেন রাম। আই-সার্ভের গবেষকদের দাবি, এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় রামের বনবাসের ত্রয়োদশ বর্ষে।
সাধারণভাবে রামায়নের আভ্যন্তরীণ সাক্ষ্যের উপরে নির্ভর করে ঐতিহাসিকরা মনে করেন, রামায়নের কাহিনি ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ঘটনা। আই-সার্ভের গবেষণা সেই সময়কালকে এক ধাক্কায় আরও ৩০০০ বছর পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী। স্বাভাবিকভাবেই এক বাক্যে এই মতকে মেনে নিতে আপত্তি রয়েছে ঐতিহাসিক মহলের। আই-সার্ভের গবেষণা পদ্ধতি সবিস্তার না জানা পর্যন্ত এই মতের গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণ সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন তাঁরা।