“ হোলি ” আমরা প্রায়ই সকলে সেই বিষয়ে জেনে না জেনে পালন করে আসছি আবার অনেকে ভুল মনগড়া কাহিনীতে বিশ্বাস করে পালন করছি। অধিকাংশই ভগবান শ্রী কৃষ্ণ এর সাথে হোলি উৎসবের সংযোগ সৃষ্টি করে পালন করি। কিন্তু তা কি আসলে সত্য? ভগবান শ্রী কৃষ্ণের অনেক আগে থেকে হোলি পালিত হয়ে আসছে ভারতবর্ষে। তবে আসুন জেনেনি আসল সত্যটা কি।
হিরণ্যকশিপুর ভক্তি তে খুশি হয়ে ভগবান বিষ্ণু রাজা হিরণ্যকশিপুকে কিছু বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছিলেন, কিন্ত পরবর্তী কালে অত্যন্ত অহংকারী এই রাজা বিষ্ণুর উপাসনা বন্ধ করে সমগ্র মুলতানবাসি কে নিজের উপাসনা করতে বাধ্য করেন। হিরণ্যকশিপু পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন প্রকৃত বিষ্ণু ভক্ত, তিনি কখনওই বিষ্ণুর উপাসনা পরিত্যাগ করে পিতার উপাসনা করতে রাজি ছিলেন না।
হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদ কে মেরে ফেলার জন্যে বিষ প্রয়োগ করেন, মত্ত হাতীর পায়ের নীচে ফেলে দেন, বিষধর সাপেদের সঙ্গে কারারুদ্ধ করে রাখেন, কিন্তু কোনভাবেই তাকে হত্যা করতে সক্ষম হন নি। অতঃপর তিনি ভগিনী হোলিকার সাহায্যে প্রহ্লাদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
কথিত আছে, হোলিকার একটি মন্ত্রপূত শাল ছিল, যা তাকে আগুনের হাত থেকে রক্ষা করত। প্রহ্লাদ আগুন প্রবেশ করামাত্র প্রবল শক্তিশালী বাতাস বইতে থাকে এবং সেই মায়াবী শাল হোলিকার পরিবর্তে প্রহ্লাদকে আবৃত করে রাখে। আগুনে পুড়ে হোলিকার মৃত্যু হয়। হোলিকা দহনের সময় নৃসিংহরুপী বিষ্ণু হিরণ্যকশিপুরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং তাকে দু টুকরো করে ফেলে হত্যা করেন। মুলতানের সূর্য মন্দির এই ঘটনার সাক্ষ্য দেয় এবং এটিকে এই ঘটনার স্মারক মন্দির হিসাবে মনে করা হয়ে থাকে।
হিরণ্যকশিপুর কনিষ্ঠ ভগিনী হোলিকার নামানুসারে হোলি শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়। ভ্রাতুষ্পুত্র প্রহহ্লাদকে হত্যা করার প্রয়াসে আগুনে পুড়ে এই হোলিকার মৃত্যু হয়। রাজা হিরণ্যকশিপুকে ভগবান বিষ্ণু নরসিংহ রুপে বধ করেন সেই আনন্দে আজও হোলি পালিত হয়।
উৎসবের শুরুঃ-
অধুনা পাঞ্জাবের মুলতান প্রদেশের প্রহ্লাদপুরী মন্দির থেকে হোলি উৎসবের উৎপত্তি। পিতা হিরণ্যকশিপুর অত্যাচার থেকে বাঁচানোর জন্যে বিষ্ণুর অবতার নৃসিংহের উদ্দেশ্যে এই মন্দিরটি তৈরি করেন প্রহ্লাদ। এই হোলি উৎসবের মাধ্যমেই আবার বসন্তকালের সূচনা হয় । ফাগুনী পূর্ণিমার রাতে হোলিকাদহন উৎসবের মাধ্যমে পাঞ্জাবে দুদিন ব্যাপী হোলি উৎসবের সূচনা হয়।পরের দিন অর্থাৎ চৈত্র (বাংলায় চৈত্র) মাসের প্রথম দিনে হোলি পালিত হয়।
অন্য অর্থে -
হোলি শব্দের উৎপত্তি হয়েছে হোলা থেকে। যার অর্থ হল আগাম ফসলের প্রত্যাশায় ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন। সংস্কৃত শব্দ হোলকা অর্থাৎ অর্ধ-পক্ব শস্য থেকেও হোলি শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়। এখনও এই সমস্ত অঞ্চলে হোলির দিনে অর্ধ পক্ব গম এবং ছোলা খাওয়ার রীতি আছে।
পাঞ্জাবে হোলির দু মাস পরে অর্থাৎ বৈশাখ মাসে গম কাটা হয়ে থাকে, তাই অনেকসময় এই হোলি উৎসবকে আগাম শস্য সংগ্রহ করার উৎসব হিসাবে চিহ্নিত করে কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করা হয়।