ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের জন্মতিথি বা রাম নবমী আমরা প্রায় সকলেই জানি ,কিন্তু আপনি কি জানেন ভগবান শ্রীরামচন্দ্র কিভাবে ধরাভূমি পাড়ি দিয়েছিলেন। তবে সেই বিষয়ে জানুন আমাদের পুরান কি বলছে। দশরথের প্রথম পুত্রকে বলা হয় পুরুষোত্তম। কিন্তু জানেন কি কীভাবে মৃত্যু হয়েছিল ভগবান রামচন্দ্রের? মর্ত্যে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে ফিরে যান অমর্ত্যলোকে।
তবে রামায়ণে রামের মৃত্যুর প্রসঙ্গ আছে। ১১ হাজার বছর শাসনকালে রামচন্দ্র বহু যজ্ঞ করেন। ভগবান রামচন্দ্র এবং তাঁর ভাইয়ের পুত্ররা বিশাল রাম-রাজত্বের বহু অংশ শাসনভার পান। সীতাদেবী ফিরে যান তাঁর মা, পৃথিবীর কাছে। ক্রমে ভগবান রাম বোঝেন, মর্ত্যে তাঁর কাজ শেষ হয়েছে। এবার ফিরে যেতে হবে দেবলোকে।
পদ্ম পুরাণ মতে, একদিন রামের কাছে একজন ঋষি আসেন। বলেন, রামচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর একান্তে ব্যক্তিগত কথা আছে। কেউ যেন সেই সময় ঘরে না ঢোকে। রাম সেইমতো পাহারায় রাখেন লক্ষ্মণকে। নির্দেশ দেন, কেউ ঘরে ঢুকলে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। বলা হয়, এই ঋষি হলেন আসলে কালদেব। সময়ের দেবতা। সেই সময় সেখানে আসেন ঋষি দুর্বাসা। ঢুকতে না পেরে তিনি রঘু বংশ এবং অযোধ্যাকে অভিশাপ দিতে যান। সবাইকে বাঁচাতে অভিশাপ নিজের ঘাড়ে নিয়ে নেন লক্ষ্ণণ।
তিনি অনুভব করেন এই পরিস্থিতি আসলে কালের খেলা। তাঁর চলে যাওয়ার সময় এসেছে বুঝতে পেরে লক্ষ্মণ চলে যান সরযূ তীরে। বিলীন হয়ে যান নদীতে। ভগবান রাম যখন খবর পান, তিনিও সরযূতে গিয়ে বিলীন হয়ে যান। সেইসময় ভগবান বিষ্ণুর ‘অনন্ত শেষ’ অবতার এসে আশীর্বাদ করেন ভক্তদের।
রামায়নের অন্য একটি সূত্র আবার রামের মৃত্যু অন্যভাবে ব্যাখ্যা করে। সেখানে বলা হয়, ভগবান রামচন্দ্র বুঝতে পারেন মর্ত্যের কাজ শেষ করে এবার তাঁর সুরলোকের ফিরে যাওয়ার সময়। তিনি যমরাজের অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু অযোধ্যার দ্বারে পাহারায় ছিলেন স্বয়ং হনুমান। ফলে ভয়ের চোটে যমরাজ ঢুকতে পারছিলেন না। জানতে পেরে ভগবান রামচন্দ্র নিজের আংটি ফেলে দেন প্রাসাদে পাথরের খাঁজে। হনুমানকে আদেশ দেন খুঁজে আনতে।
হনুমান তখন পোকার আকার ধরে সেই ফাঁকে গলে যান। কিন্তু তিনি পৌঁছে যান নাগলোকে।সেখানে বাসুকি নাগের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় হনুমানের। বাসুকিকে হনুমান বলেন, তিনি রামের আংটি খুঁজতে এসেছেন। শুনে বাসুকি বিশাল আংটির পাহাড় দেখিয়ে দেন। আংটির পাহাড়ে গিয়ে হনুমান দেখেন, সেখানে সবই রামের আংটি। হনুমান বিভ্রান্ত হয়ে যান। এরপর বাসুকি নাগ হনুমানকে বোঝান জন্ম-মৃত্যু চক্রের কথা। হনুমান তখন বুঝতে পারেন,ভগবান রামচন্দ্রের বৈকুণ্ঠে ফিরে যাওয়ার সময় আসন্ন|।এভাবেই পুরাণ-সাহিত্যে মহাকাব্যিক বিদায় পেয়েছেন বিষ্ণুর সপ্তম অবতার রামচন্দ্র।
ত্রেতা যুগে রামচন্দ্র ছাড়াও অবতীর্ণ হয়েছিলেন বিষ্ণুর আরও দুই অবতার, পরশুরাম এবং বামন । দ্বাপর যুগে কৃষ্ণ এবং বুদ্ধ । বাকি আছে শুধু দশম অবতার। কল্কিদেব। যিনি নাকি সাদা ঘোড়ায় চেপে আসবেন ঘোর কলিকালে।