ভারতের বহু মন্দিরকে কেন্দ্র করেই দানা বেঁধেছে নানা অমীমাংসিত রহস্য। তেমনই এক রহস্যমণ্ডিত মন্দির হল রাজস্থানের অচলেশ্বর মহাদেব মন্দির। এই শিব মন্দিরটিতে যে শিবলিঙ্গটি পূজিত হয় সেটি নাকি নিজে থেকেই দিনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রঙে রঞ্জিত হয়ে ওঠে।
রাজস্থানের সিরোহী জেলায় অচলগড় কেল্লার ঠিক বাইরেই এই মন্দিরের অবস্থান। কথিত আছে, মহাদেবের একটি পায়ের ছাপকে কেন্দ্র করে এই মন্দিরটি গড়ে ওঠে। আনুমানিক নবম শতকে তৈরি হয় এই মন্দির। চার টনের একটি নন্দীর মূর্তি রয়েছে এই মন্দিরে। মূর্তিটি পঞ্চধাতু দিয়ে তৈরি। কিংবদন্তি অনুসারে, নন্দীর এই মূর্তি মন্দিরের রক্ষাকর্তা। প্রাচীন কালে কোনও এক মুসলমান শাসকের নির্দেশে নাকি এই মন্দির ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছিল। তখন নন্দীর এই মূর্তির মুখ থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি। মৌমাছির তাড়নায় পালিয়ে যায় মন্দিরে আক্রমণকারীরা। মন্দিরের মধ্যে রয়েছে একটি স্তূপ। স্থানীয়দের বিশ্বাস এই স্তূপটি আদপে নরকের দক্ষিণ দ্বার। মন্দিরের অদূরে রয়েছে একটি পুকুর। পুকুরের পাড়ে রয়েছে তিনটি ধাতব মহিষের মূর্তি। বলা হয়, এই তিনটি মূ্র্তি আসলে তিনটি রাক্ষসের প্রতিরূপ। এক সময়ে এই রাক্ষসত্রয় আক্রমণ করেছিল এই মন্দির। তখন রাজা আদি পাল তাদের হত্যা করেন।
এই মন্দিরকে ঘিরে রহস্যের যেন শেষ নেই। মন্দিরটির সংস্কারসাধন হয়েছে বহুবার। একবার গর্ভগৃহটি সংস্কারের সময় খোঁড়াখুঁড়ি করতে গিয়ে গর্ভগৃহ বেষ্টন করে থাকা একটি সুড়ঙ্গ আবিষ্কৃত হয়। সুড়ঙ্গের মধ্যে দু’টি কুলুঙ্গিতে পাওয়া যায় দেবী চামুণ্ডার দু’টি মূ্র্তি। দেখা যায়, মূর্তি দু’টিতে লেপা রয়েছে সিঁদুর। যেন সদ্য পূজিতা হয়েছেন দেবী। কিন্তু এমন গুপ্ত সুড়ঙ্গপথে কারা পুজো করে যেত দেবীর? সেই প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি।
তবে এই মন্দিরের সবচেয়ে রহস্যময় বস্তুটি এর ভিতরে থাকা শিবলিঙ্গটি। দিনের বিভিন্ন সময়ে এর রং থাকে বিভিন্ন রকমের। দিনে অন্তত তিন বার রং বদলায় এই শিবলিঙ্গ। সকাল বেলা এর রং থাকে লাল, বিকেলে হয় জাফরান, আর রাত্রে এর রং হয় কালো।
সারা পৃথিবী থেকে অজস্র মানুষ এই অদ্ভুত শিবলিঙ্গ দর্শনের উদ্দেশ্যে ছুটে আসেন। ভক্তরা গোটা বিষয়টিকেই ঐশ্বরিক লীলা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা অবশ্য অন্যরকম। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মন্দিরের গায়ে যে অজস্র স্ফটিক লাগানো রয়েছে, তাতে দিনের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন রং-এর সূর্যালোক প্রতিফলিত হয়েই তৈরি হয় এই রং-এর খেলা। ভক্তদের কাছে সেই ব্যাখ্যার মূল্য নেই। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে রহস্যময় এই মন্দির দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
এইবেলাডটকম/এএস