প্রতীকী ছবি |
বঙ্গাব্দের উৎপত্তি নিয়ে অনেকগুলো মতের মধ্যে প্রধানমত মত হলো চারটি:
১. সম্রাট আকবর
২. সুলতান হুসেন শাহ
৩.তিব্বতীয় শাসক স্রং-সন-গাম্পো
৪. গৌড় বঙ্গের প্রথম সার্বভৌম রাজা শশাঙ্ক
এর মধ্যে সম্রাট আকবরকে নিয়ে প্রথম মতটি অনেক শক্তিশালী। পাকিস্থান আমল থেকে বিশেষ রাজনৈতিক কারণে এই মতটিকে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালানো হয়। বলা হয়ে থাকে সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহণের বছর ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ, হিজরী ৯৬৩ সালকে বঙ্গাব্দের প্রথম বছর ধরে আমীর ফতই উল্লাহ সিরাজির প্রচেষ্টায় বঙ্গাব্দের প্রবর্তন করেন। এই যুক্তি অনুসারে ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের আগে কোন বঙ্গাব্দ ছিলো না। সত্যি কি তাই!
তবে কেন বাকুড়ার একটা মন্দিরে ১০২ বঙ্গাব্দের উল্লেখ আছে? এবং বৃন্দাবনচন্দ্র পুততুণ্ড রচিত "চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাস" গ্রন্থে ৬০৬ বঙ্গাব্দের উল্লেখ আছে?
এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত দেয়া যায় শুধুমাত্র নয়, যারা পাণ্ডুলিপি বা পুরাতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করছেন তারা দেখেছেন বা দেখবেন যে ; সম্রাট আকবরের সময়ের বা ১৬ শতাব্দীপূর্ব পাণ্ডুলিপিগুলিতে অনেক স্থানেই বঙ্গাব্দের নিদর্শন পাওয়া যায়। বাংলা অঞ্চলে পাওয়া পাণ্ডুলিপিতে অধিকাংশ স্থানেই শকাব্দ এবং কিছুকিছু স্থানে শুধুমাত্রই তারিখ দেয়া আছে, সেই তারিখগুলি সুস্পষ্টরূপে বঙ্গাব্দের। যারা আকবরকে বঙ্গাব্দের প্রবর্ত্তক বলেন এবং বলেন ৯৬৩ হিজরী সালকে বঙ্গাব্দে প্রতিস্থাপন করেই বঙ্গাব্দ যাত্রা শুরু করেছে ; এটা যে কত হাস্যকর এবং বালখিল্য কথা তা একটা বাচ্চা ছেলেও বুঝবে। শুধুমাত্র গায়ের জোড়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বলা হচ্ছে। যার বাস্তব ভিত্তি অনেক নড়বড়ে।
বঙ্গাব্দের উৎপত্তি নিয়ে ২ এবং ৩ নং মতটির পক্ষে বিশেষ যুক্তি নেই তাই, এ নিয়ে বিশেষ আলোচনায় যাচ্ছি না।
বঙ্গাব্দের উৎপত্তি নিয়ে ২ এবং ৩ নং মতটির পক্ষে বিশেষ যুক্তি নেই তাই, এ নিয়ে বিশেষ আলোচনায় যাচ্ছি না।
আমরা এখন চতুর্থ জোরালো মত নিয়ে আলোচনা করে দেখবো এর পক্ষে যুক্তিসমূহ -
পঞ্জিকার বর্ষগণনা অনেক জটিল, আমরা তাই কোন জটিল এবং কুটিল পথে না যেয়ে সহজভাবে দেখার চেষ্টা করবো। ধরুন এখন ইংরেজি চলছে ২০১৮ সাল এবং বাংলার চলছে ১৪২৪ বঙ্গাব্দ। ইংরেজি কত খ্রিস্টাব্দ থেকে বঙ্গাব্দ শুরু হয়েছে এটা জন্যে আমাদের ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪২৪ বঙ্গাব্দকে বিয়োগ করলে আমরা ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দ পাই। অর্থাৎ ইংরেজি ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দেই বঙ্গাব্দের প্রবর্তন হয়।
সেইসময় বাংলার বিভিন্ন জনপদে বিভক্ত বাংলার শাসক কে ছিলেন?
সহজ উত্তর গৌড় বঙ্গের প্রথম সার্বভৌম রাজা তখন শশাঙ্ক। তিনি বিভিন্ন জনপদগুলোকে এক করে গৌড় সাম্রাজ্যের প্রবর্তন করেন।
লোডস্টার, প্ল্যানেটরিয়াম সহ বিভিন্ন জ্যোতিষ বিজ্ঞানে সফটওয়্যারের মাধ্যমে যদি দিনটিকে আমরা বিশ্লেষণ করি তবে দেখতে পাবো ১ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ তারিখটি ছিলো - ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল সোমবার।
সেইসময় বাংলার বিভিন্ন জনপদে বিভক্ত বাংলার শাসক কে ছিলেন?
সহজ উত্তর গৌড় বঙ্গের প্রথম সার্বভৌম রাজা তখন শশাঙ্ক। তিনি বিভিন্ন জনপদগুলোকে এক করে গৌড় সাম্রাজ্যের প্রবর্তন করেন।
লোডস্টার, প্ল্যানেটরিয়াম সহ বিভিন্ন জ্যোতিষ বিজ্ঞানে সফটওয়্যারের মাধ্যমে যদি দিনটিকে আমরা বিশ্লেষণ করি তবে দেখতে পাবো ১ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ তারিখটি ছিলো - ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল সোমবার।
৫৯৪ খ্রিস্টাব্দটি ছিলো সম্ভবত গৌড় বঙ্গের প্রথম সার্বভৌম রাজা শশাঙ্কের রাজ্যাভিষেকের বছর। আর রাজা শশাঙ্ক যে কট্টরপন্থী শৈব ছিলেন, তা ইতিহাস পাঠকমাত্রই জানেন। এবং তাই শৈবপন্থী কোন রাজা অবশ্যই শৈবদের কাছে পরম পবিত্র সোমবার দিনটিকেই যে রাজ্যাভিষেক,অব্দ প্রবর্তন সহ সকল কাজেই বেছে নিবেন ; তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
(এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্যে আগ্রহীরা পড়তে পারেন সুনীলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা, "বঙ্গাব্দ প্রসঙ্গ")
(এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্যে আগ্রহীরা পড়তে পারেন সুনীলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা, "বঙ্গাব্দ প্রসঙ্গ")
শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী
সহকারী অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়