পবিত্র বেদ মন্ত্র নিয়ে বিধর্মীদের অপপ্রচার ও মন্ত্র গুলোর সঠিক অর্থ জানুন।


পবিত্র বেদ মন্ত্র নিয়ে  মুসলিমরা অপপ্রচার করেছে সেই মন্ত্র গুলোর সঠিক অর্থ জানুন—

         মন্ত্র গুলোর অপপ্রচারের উত্তর নিচে ↓


অধঃ পশ্যস্ব মোপরি সন্তরাং পাদকৌ হর।
মা তে কশপ্লকৌ দৃশন্ স্ত্রী হি ব্রহ্মা বভূবিথ।।
(ঋগ্বেদ, ৮/৩৩/১৯)

অনুবাদ অর্থঃ— হে নারী ও পুরুষ, তোমরা ভদ্র ও সংযত হও। পোষাক পরিচ্ছেদ ও আচরনে অশ্লীলতা ও অসভ্যতা বর্জন কর।

#শব্দার্থঃ হে নারী! (অধঃ পশ্যস্ব) নিচে দেখ (মা উপরি) উপরে দেখ না। (পাদকৌ সন্তরাং হর) দুই পাকে ঠিক প্রকার হইতে একত্র করে রাখ। (তে কশপ্লকৌ) তোমার শরীরের=দুই স্তন, পীঠ আর পেট, দুই নিতম্ব, দুই জঙ্ঘা, দুই পিণ্ডলিয়া [পায়ের গোড়ালি], দুই কনুই (মা দৃশন্) দেখতে দেবে না। এইসব কিছু কি জন্যে? (হি) কেননা (স্ত্রী) স্ত্রী (ব্রহ্মা) ব্রহ্মা, নির্মাণকর্ত্রী (বভূবিথ) হয়ে থাকে।

#ভাবার্থঃ এই মন্ত্রে নারীর শালীনতার অনেকই সুন্দর চিত্রণ বলা হয়েছে। প্রত্যেক স্ত্রীর এই গুণকে নিজের জীবনে ধারণ করা উচিত।

১) স্ত্রীদের নিজের দৃষ্টি সদা নিচে রাখা উচিত, উপরে নয়। নিচে দৃষ্টি রাখা লজ্জা আর শালীনতার চিহ্ন হয়। উপরে দেখা নির্লজ্জতা আর অশালীনতার দ্যোতক হয়।

২) স্ত্রীদের চলার সময় দুই পাকে মিলিয়ে বড় সাবধানে চলা উচিত। হেলেদুলে চলা, অঙ্গভঙ্গীতে চলা, হাব-ভাবের প্রদর্শন করিয়ে, চঞ্চলতা আর চপলতা হইতে চলা উচিত নয়।

৩) নারিদের বস্ত্র এই প্রকার ধারণ করা উচিত যা তাহার গুপ্ত অঙ্গ-স্তন, পেট, পিঠ, জঙ্ঘা, পিণ্ডলিয়া আদি দেখতে দেবে না। নিজের অঙ্গর প্রদর্শন করা বিলাসিতা আর লম্পটতার দ্যোতক হয়।

৪) নারীর জন্য এমন বন্ধন কেন? ঐরূপ কঠোর সাধনা কি জন্য? এইজন্য যা নারী ব্রহ্মা হয়, সে জীবন-নির্মাত্রী আর সৃজনকর্ত্রী হয়। যদি নারীই বিগড়ে যায় তবে সৃষ্টিও বিগড়ে যায়। মাতাদের আর বোনেদের! নিজের অঙ্গকে প্রদর্শন করা উচিত নয়।


ভাষ্যঃস্বামী জগদীশ্বরানন্দ সরস্বতী

সনাতন ধর্ম কি অশ্লীল পোশাক পরা সমর্থন করে না

অধঃ পশ্যস্ব মোপরি সন্তরাং পদকৌ হর।
মা তে কশপ্লকৌ দষান্তস্রীহি ব্রক্ষা ভুবিথ।। 
(ঋগ্বেদ ৮.৩৩.১৯)

অনুবাদ অর্থঃ— হে পুরুষ ও নারী তোমাদের দৃষ্টি সবসময় হোক ভদ্র ও অবনত। তোমাদের চলন হোক সংযত, দেহ হোক পোষাকে আবৃত, নগ্নতা হোক পরিত্যজ্য।

কিন্তু দুঃখের বিষয় কিছু সনাতন ধর্মীয় মেয়ে আছে তারা ধর্মীয় নিয়ম না মেনে তারা অশ্লীল পোষাক পরে। সকলে অশ্লীল পোষাক ত্যাগ করুন ও আপনার সন্তানদের অশ্লীল পোষাক পরিধানে বাধা দিন।

(ঋগ্বেদ, ১০/৯৫/১৫) তে নারীদের হায়েনা বলা হয়েছে। খুবই ধূর্ততার সাথে #ভন্ড_মুসলিমরা পুরো মন্ত্রটা না দিয়ে অর্ধেক মন্ত্র ব্যবহার করে অপপ্রচার করছে সেই মন্ত্রটির সঠিক অর্থ জেনেনিন—

"যে সকল নারী শারীরিক আকর্ষনের দ্বারা তোমার বন্ধুত্ব করতে চায় তারা ধূর্ত শকুন স্বরুপ। তাদেরকে এড়িয়ে চল, ভূলেও রাজ্যের গোপন তথ্য তাদের বলোনা যাতে বিপদ ঘটতে পারে।"
                    (ঋগ্বেদ, ১০/৯৫/১৫)

এ সুক্তটির নাম পুরুরাব-উর্বশী সুক্ত যেখানে একজন ক্ষত্রিয় রাজাকে এই উপদেশ দেয়া হচ্ছে।

(ঋগ্বেদ, ৮/৩৩/১৭) মন্ত্র নিয়ে মুসলিমরা সনাতন ধর্মের হিন্দু মেয়েদের ভুল বুঝানো চেষ্টা করেছে যেন মুসলিম হয়ে যায়। সেই (ঋগ্বেদ, ৮/৩৩/১৭) নিয়ে অপপ্রচার এর জবাব দিচ্ছি সত্যটা—


ইন্দ্রাশ্চিত্‍ ঘা তদব্রভিত স্ত্রীয় অসস্যম মনঃ।
উতো অহ ক্রতুং রঘুম।

অনুবাদ- "নারীদের অবদমিত করা যায়না, তাদের বুদ্ধিমত্তা অপর্যাপ্ত ও গতিময়।"

এই মন্ত্রে অসস্যম শব্দের অর্থ 'যাকে দমিয়ে রাখা যায়না' যাকে ভন্ড জাকির এর অর্থ বিকৃত করে বলেছে 'যাকে শেখানো যায়না। 'আর অপর্যাপ্ত শব্দের অর্থ অপরিমেয় যা (গীতার ১ম অধ্যায়ের ১০ শ্লোকে) দেয়া হয়েছে।

রামকৃষ্ণ পরমহংসের শিষ্য, হিন্দু সন্যাসী, দার্শনিক স্বামী বিবেকানন্দ যখন আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে যোগদিতে গেলেন, তখনো ভারতীয় হিন্দুদের কাছে সাগর পাড়ি দেয়া ধর্ম ত্যাগের শামিল। ২৬ বছর বয়সের গেরুয়া বসনের এক যুবক সন্যাসী শিকাগোর সেই সম্মেলনে ভোগবাদের বিপরীতে মানবতার কথাই বলে এসেছিলেন। বিবেকানন্দ বিশ্বাস করতেন "প্রত্যেক আত্মাই সম্ভাব্যরূপে ঐশ্বরিক/দেবসুলভ।" সেই দেবসুলভ আত্মা অচ্ছুৎ হয় কি করে?

সতীদাহ প্রথা নামে এক কুপ্রথার চল ছিল এই ভারতীয় হিন্দু সমাজে, যার নেই কোন ধর্মভিত্তি। ভারতীয় বেদ ভাষ্যকারগণদের মতে বেদে সতীদাহের উল্লেখ নেই। বরং স্বামীর মৃত্যুর পর পুনর্বিবাহের ব্যাপারেই তাঁরা মত দিয়েছেন। এ বিষয়ে অথর্ববেদের দুটি মন্ত্র প্রণিধানযোগ্যঃ—

(অথর্ববেদ, ১৮/৩/১-৩) মন্ত্র নিয়ে মুসলিমরা সনাতন ধর্মের হিন্দু মেয়েদের ভুল বুঝানো চেষ্টা করেছে যেন মুসলিম হয়ে যায়। সেই (অথর্ববেদ, ১৮/৩/১-৩) নিয়ে অপপ্রচার এর জবাব দিচ্ছি সত্যটা—               


ইয়ং নারী পতি লোকং বৃণানা নিপদ্যত উপত্ব্য মর্ন্ত্য প্রেতম্।
ধর্মং পুরাণমনু পালয়ন্তী তস্ম্যৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি।।

পদার্থঃ— মর্ত্য-হে মনুষ্য, ইয়ং নারী-এই স্ত্রী, পতিলোকম-পতিলোককে অর্থাত্ বৈবাহিক অবস্থাকে, বৃণনা-কামনা করিয়া, প্রেতম-মৃত পতির, অনু-পরে, উপ ত্বা-তোমার নিকট, নিপদ্যতে-আসিতেছে, পুরাণম-সনাতন, ধর্ম্মম-ধর্মকে, পালয়ন্তী-পালন করিয়া, তস্য-তাহার জন্য, ইহ-এই লোকে, প্রজাম্-সন্তানকে, দ্রবিণং-এবং ধনকে, ধেহি-ধারন করাও।

বঙ্গানুবাদঃ— হে মনুষ্য! এই স্ত্রী পুনর্বিবাহের আকাঙ্খা করিয়া মৃত পতির পরে তোমার নিকট আসিয়াছে। সে সনাতন ধর্মকে পালন করিয়া যাতে সন্তানাদি এবং সুখভোগ করতে পারে। (১-২)

বঙ্গানুবাদঃ— হে নারী! মৃত পতির শোকে অচল হয়ে লাভ কি?বাস্তব জীবনে ফিরে এস। পুনরায় তোমার পাণিগ্রহনকারী পতির সাথে তোমার আবার পত্নীত্ব তৈরী হবে। (১-৩)

(অথর্ববেদ, ১৮/৩/২), (এই মন্ত্রটি ঋগ্বেদ, ১০/১৮/৮ ও আছে)।


উদীষর্ব নার্ষ্যভি জীবলোকংগতাসুমেতমুপশেষ এহি।
হস্তাগ্রাভস্য দিধিষোস্তবেদং পত্যুর্জনিত্বমভি সংবভূব।।

নারী-হে স্ত্রী! তুমি, এতত্‍ গতাসুম্-এই গতপ্রান পতির, উপশেষে-শয়ন করিয়া আছ (মায়া ধরে আছ), জীবলোকং অভি উদীর্থ-(মায়া ত্যগ করে) বাস্তবতায় ফিরে এস (জীবলোকে), তব- তোমার, হস্তগ্রাভস্য দিধিষোঃ-পাণিগ্রহনকারী, পত্যুঃ-পতির সঙ্গে, ইদং জনিত্বম-আবার পত্নীত্ব, অভি সংবভুব-সৃষ্টি হল।

অর্থাত্‍, হে নারী! মৃত পতির শোকে অচল হয়ে লাভ কি? বাস্তবজীবনে ফিরে এস। পুনরায় তোমার পাণিগ্রহনকারী পতির সাথে তোমার আবার পত্নীত্ব তৈরী হবে।

সায়নভাষ্যে এই মন্ত্রের অর্থ দেখা যায়

"হে মৃতপতীর পত্নী! জীবিত পুত্রপৌত্রের লোক অর্থাত্‍গৃ হের কামনা করে শোক ত্যগ কর।মৃত পতির মায়া ত্যগ কর।তোমার পাণিগ্রহনকারী পতির স্ত্রী হইবার ইচ্ছায় তুমি নিশ্চিতরুপে অনুসরন কর।

               #নিজের_বিচার_নিজেই_করুন

সঠিক তথ্যের বিচার নিজেরা করুন মুসলিমরা যদি গাছের ফল কলা কে কেলা বলে #সনাতন_হিন্দুরা কি এদের ভুল অর্থ বুঝে নিবেন নাকি সঠিক তথ্য বুঝে নিবেন সম্পুর্ণ আমাদের ইচ্ছা।।


ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি!

                সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, চট্টগ্রাম 
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মী
শ্রী বাবলু মালাকার
   
নবীনতর পূর্বতন