বাবা-মেয়ের সম্পর্ক ও মেয়েদের অধিকার নিয়ে বিধর্মীদের মিথ্যা অপপ্রচারের জবাব।




বাবা মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে মুমিনদের মিথ্যা অপপ্রচারের জবাব— 


“পিতার সম্পত্তিতে নারী ও পুরুষের সমান আধিকার রয়েছে।” (ঋগ্বেদ, ৩/৩১/১)

“কন্যা পুত্রের সমান। তার উপস্থিতিতে কেউ তার সম্পত্তিতে অধিকার ছিনিয়ে নিতে পারেন না”।
                   (মনুসংহিতা, ৯/১৩০)

“পুত্রহীন পিতা সমর্থ জামাতাকে সম্মানিত করে শাস্ত্রানুশাসনক্রমে দুহিতা জাত পৌত্র প্রাপ্ত হন। অপুত্ত পিতা দুহিতার গর্ভ হতে বিশ্বাস করে প্রসন্নমনে শরীর ধারণ করেন।” (ঋগ্বেদ, ৩/৩১/১)


“মাতার যা স্ত্রীধন থাকবে, তা কুমারী কন্যারই থাকবে”।

(মনুসংহিতা, ৯/১৩১)

          বাবা মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে বিশ্লেষণ

যে পিতা পুত্রহীন অর্থাৎ যে লোকের কন্যা আছে কিন্তু পুত্র নেই, সে তার জামাই অর্থাৎ মেয়ের স্বামীকে সন্তুষ্ট করে মেয়ে-জামাই এর ছেলেকে নিজের দায়িত্বে নিতে পারবেন। খেয়াল করবেন, শ্লোকের মধ্যে লিখা আছে, “দুহিতা জাত পৌত্র”- এর মানে হলো কন্যার পুত্র। এই ভাবে কন্যার পুত্রের দায়িত্ব নিয়ে তাকে বড় করে তুললে, এই নাতী ই পুত্রের মতো করে দাদুর সকল রকম দায়িত্ব পালন করবে। বেদ এর বিধানের ফলেই হিন্দু সমাজে যাদের পুত্র নেই, তাদের সম্পত্তির মালিক হয় কন্যার পুত্ররা এবং শাস্ত্রমতে কন্যার পুত্ররা পুত্রের মতোই দাদুর অন্ত্যেষ্টি্ক্রিয়ারও অধিকারী।

“পুত্র কন্যাকে পিতৃসম্পত্তি থেকে আলাদা করে দেয়না, তা সমানই থাকে বরং সে তার বোনকে শিক্ষিত, সংস্কৃতিবান করে গড়ে তোলে এবং স্বামীর হাতে তুলে দেয়।” (ঋগ্বেদ, ৩/৩১/২)

“ঔরসপুত্র দুহিতাকে পৈতৃক ধন দেন না। তিনি তাকে ভর্তার প্রণয়ের আধার করেন। যদি পিতামাতা পুত্র কন্যাং উভয়েই উৎপাদন করেন তা হলে তাদের মধ্যে একজন উৎকৃষ্ট ক্রিয়া কর্ম করেন, এর অন্যজন সম্মানিত হন।” (ঋগ্বেদ, ৩/৩১/২)


"যাসাং নাদদতে শুলকং জ্ঞাতয়ো ন স বিক্রয়ঃ।
অর্হণং তত্ কুমারীণামানৃশংস্যঞ্চ কেবলম্।।
(মনুসংহিতা, ৩/৫৪)

অনুবাদঃ— কন্যার পিতা প্রভৃতি আত্মীয়স্বজন যেখানে কন্যাকে বরপক্ষপ্রদত্ত ধন গ্রহন করে না, সেখানে অপত্ত ত্যগ হয় না। কন্যাকে সম্মান প্রদানপূর্বক বরপক্ষকে কন্যার পিতার নিকট এই ধন প্রদান করতে হয়।

"মেয়েকে বিয়ের সময়ে অর্থসম্পত্তির যৌতুক দিওনা, তাকেজ্ঞান সম্পদের যৌতুক দান কর। (সুশিক্ষিত করে বিয়ে দাও)।" (অথর্ববেদ, ১৪/১/৬)

অনুবাদঃ— একমাত্র বৈদিক শাস্ত্রই নারীদেরকে পুরুষের সমান আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। বিবাহের সময় কন্যার পিতা বরপক্ষকে নয় বরং বরপক্ষই সম্মানপূর্ব কন্যাকে ধন দ্বারা আদৃত করবেন।

"পিতৃভির্ভ্রাতৃভিশ্চৈতাঃ পতিভির্দেবরৈস্ত থা।
পূজ্যা ভূষয়িতব্যশ্চ বহুকল্যাণমীপ্সু ভিঃ।।

অনুবাদঃ- তবে বিবাহকালে বরই শুধু কন্যাপক্ষকে কন্যার প্রতি সম্মানপূর্বক ধন দেবেন এমন নয়।বিবাহোত্তর কালে কন্যার পিতা, ভ্রাতা ইত্যাদি যদি কন্যার সুখের জন্য কিছু দান করতে অভিলাষী হন, সেক্ষেত্রে বর কনেকে নিমন্ত্রনপূর্বক ভোজনাদি বা কন্যাকে বস্ত্রালঙ্কারাদি দ্বারা ভূষিত করবে।
                     (মনুসংহিতা, ৩/৫৫)
             
          ভাই বোনের সম্পর্ক নিয়ে বিশ্লেষণ

সনাতন ধর্মের পবিত্র বেদে ঋগ্বেদ বাণীতে একটি গল্প আছে যম-যমীর এটাতে বুঝা যায় ভাইবোন রক্তের বাঁধন। যেমন বোনের কাছে ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধন। ঠিক তেমনি ভাইয়ের কাছে বোন বড় ধন রক্তের বাঁধন।

ভাইবোন হোক বা ছেলেমেয়ে হোক উভয়ের জন্য পূর্বপুরুষদের সম্পত্তিতে সমান অধিকার আছে।

এই মন্ত্রে ছেলে ও মেয়ে সন্তানের সম্পত্তির উত্তরাধিকারের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। একটি পিতামাতার যদি শুধু মেয়ে সন্তান থাকে তবে পিতৃসম্পত্তির সম্পূর্ন ভাগটাই সে পাবে, আর যদি তার ভাই থাকে তাহলে দুজনের মধ্যে তা সমানভাবে ভাগ হবে, কোনভাবেই তা এককভাবে শুধু পুত্রসন্তান পাবেনা। আর পিতা-ভ্রাতাদের কর্তব্য হল কন্যাকে বিয়ের আগেই শিক্ষা-কৃষ্টিতে স্বয়ংসম্পূর্ন হিসেবে গড়ে তোলা একজন পুত্রের কাজ সংসারের দায়িত্বভার নেয়া আর একজন কন্যা সন্তানকে পিতামাতার জন্য পবিত্রতা ও গুনের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।


                     নারীর নিরাপত্তা বিধান

“স্ত্রীলোককে রক্ষণরূপ ধর্ম সকল বর্ণের পক্ষে শ্রেষ্ঠ ধর্ম, অর্থাত্ শ্রেষ্ঠ কর্তব্য। তাই অন্ধ, পঙ্গু ও দুর্বল স্বামীরাও নিজ নিজ স্ত্রীকে যত্নপূর্বক রক্ষা করবে”।
                     (মনুসংহিতা, ৯/৬)

“স্ত্রীলোক কখনো পিতা, স্বামী বা পুত্রের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন না। কারণ তা পিতৃকুল ও পতিকুল উভয়কুলকেই কলঙ্কিত করে তোলে”।
                   (মনুসংহিতা, ৫/১৪৯)

“যদি কোন নারীকে সুরক্ষা দেবার জন্য পুত্র বা কোন পুরুষ পরিবারে না থাকে, অথবা যদি সে বিধবা হয়ে থাকে, যে অসুস্থ অথবা যার স্বামী বিদেশে গেছে, তাহলে রাজা তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। যদি তার সম্পত্তি তার কোন বন্ধু বা আত্মীয় হরণ করে, তাহলে রাজা দোষীদের কঠোর শাস্তি দেবেন এবং সম্পত্তি ঐ নারীকে ফেরত দেবেন”।
                    (মনুসংহিতা, ৮/২৮-২৯)


ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি!

জয় শ্রীরাম
হর হর মহাদেব

SVS
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মী
শ্রী বাবলু মালাকার
(সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, চট্টগ্রাম)
নবীনতর পূর্বতন