ঈশ্বর কে তিনি কি জন্মগ্রহণ করেন?
বেদান্তদর্শনে ঈশ্বরের স্থান কোথায়?
তাহলে চলুন দেখা যাক 👉
ঈশ্বর ও ব্রহ্মঃ
ধর্মদর্শন ও সাধনাঃ
"ওম্।। ন ত্বাবাং অন্যো দিব্যো ন পার্থিবো ন জাতো
ন জনিষ্যতে অশ্বায়ন্তো মঘবন্নিন্দ্র বাজিনো গব্যন্তস্তা হবামহে।।" (সাম উত্তরাঃ ৬৮১)
অর্থ অনুবাদঃ— হে পরমেশ্বর! (ত্বাবান) অাপনার সমক্ষ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে (অন্যঃ) অার অন্য কেহই (দিব্যঃ ন) দিব্য গুন কর্ম স্বভাব যুক্ত নেই (ন পার্থিবঃ) এবং অন্য কোন পার্থিব শক্তি, (নুজাতঃ) না তো হয়েছে, (ন জনিষ্যতে) অার না তো ভবিষ্যতে হবে। হে (মঘবন) ঐশ্বর্যশালী পরমেশ্বর! (বাজিনঃ) অাপনার বল শক্তি পরাক্রম দ্বারা (অশ্বায়ন্তঃ) মনোবলকে তীব্র শক্তিশালী করবার জন্য (গব্যন্তঃ) অভ্যান্তরীন বল বীর্য পরাক্রমকে আত্মা জ্ঞানের সঙ্গে (ত্বা) কেবল মাত্র অাপনাকেই (হবামহে) প্রাপ্তির জন্য প্রার্থনা উপসনাদি করিতেছি।
ঈশ্বর হলেন এই সমস্ত সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা- নিয়ন্ত্রক যাকে আমরা ইংরেজিতে গড বলে থাকি। আর ভগবান হলো যিনি সমস্ত ঐশ্বর্য, বীর্য্য, যশ, জ্ঞান, শ্রী, বৈরাগ্য আছেন তখন তিনি ভগবান। অনেকে মুনি ঋষিদের ও অবতার বলে আমরা ভগবান বলি। এটা আমাদের ভুল আর ঈশ্বর ও ভগবান এর পার্থক্য আছে।
ঈশ্বর সর্বব্যপী বিরাজিত তিনি উর্ধ্বে, চারপাশে সর্বদিকে বিদ্যমান সর্বব্যপী স্রষ্টা, যিনি আমাদের মধ্যেও ব্যক্তিত্বরূপে বিদ্যমান, আর এটি জেনেই একজন যোগী পুরুষ তাঁর সাথে একাত্ব হয়ে যান, যিনি তা জানেন তিনি ঈশ্বরকে সর্বব্যপী বলে বুঝতে পারেন, বুঝতে পারেন যে আমরাও তার অংশ।
ঈশ্বর সকল ব্যষ্টির সমষ্টি-স্বরূপ। তথাপি তিনি ‘ব্যক্তি-বিশেষ’, যেমন মনুষ্যদেহ একটি বস্তু, ইহার প্রত্যেক কোষ একটি ব্যষ্টি। সমষ্টি—ঈশ্বর, ব্যষ্টি—জীব। সুতরাং দেহ যেমন কোষের উপর নির্ভর করে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব তেমনি জীবের অস্তিত্বের উপর নির্ভর করে। এর বিপরীতটিও ঠিক তেমনি এইরূপে জীব ও ঈশ্বর যেন সহ-অবস্থিত দুইটি সত্ত্বা— একটি থাকলে অপরটি থাকবেই। অধিকন্তু আমাদের এই ভূলোক ব্যতীত অন্যান্য উচ্চতর লোকে শুভের পরিমাণ অশুভের পরিমাণ অপেক্ষা বহুগুণ বেশী থাকায় সমষ্টি (ঈশ্বর)-কে সর্বমঙ্গল-স্বরূপ বলা যেতে পারে। সর্বশক্তিমত্তা ও সর্বজ্ঞত্ব ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ গুণ, এবং সমষ্টির দিক্ হতেই ইহা প্রমাণ করবার জন্য কোন যুক্তির প্রয়োজন হয় না।
ব্রহ্ম এই উভয়ের ঊর্ধ্বে, এবং একটি সপ্রতিবন্ধ বা সাপেক্ষ অবস্থা নয়। ব্রহ্মই একমাত্র স্বয়ংপূর্ণ, যা বহু এককের দ্বারা গঠিত হয়নি। জীবকোষ হতে ঈশ্বর পর্যন্ত যে-তত্ত্ব অনুস্যূত, যা ব্যতীত কোন কিছুরই অস্তিত্ব থাকে না এবং যা কিছু সত্য, তাই সেই তত্ত্ব বা ব্রহ্ম। যখন চিন্তা করি— আমি ব্রহ্ম, তখন মাত্র আমিই থাকি; সকলের পক্ষেই এককথা প্রযোজ্য; সুতরাং প্রত্যেকেই সেই তত্ত্বের সামগ্রিক বিকাশ।
শাস্ত্রীয় রেফারেন্স
"অষ্ট চক্রা নব দ্বারা দেবানাং পুরুয়োধ্যা।
তস্যাং হিরণ্ময়ঃ কোশঃ স্বর্গো জ্যোতিষাবৃতঃ।।"
→(অথর্ববেদ, ১০/২/৩১)
অর্থঃ— এই শরীররূপ নগরী নব সূর্য্যাদি দেবের অধিষ্ঠানভূত। আট চক্র এবং নয় ইন্দ্রীয় দ্বারা বিশিষ্ট এইনগরী অজেয়। এই নগরীতর এক প্রকাশময় কোশ আছে (মনোময়কোষ) আনন্দময় জ্যােতি দ্বারা আবৃত।
(অথর্ববেদ ১০/২/৩১ মন্ত্রের বিশ্লেষণ)
এখানে দুটো শব্দ আছে—
১। ঈশ্বর ২। সর্বশ্রেষ্ঠ
ঈশ্বর নামক বাচক শব্দ। (বিশেষ্য পদ)
ঈশ্বর— ইষ্টে ঈশ বরচ ইতি ঈশ্বর। ঈশ ঐশ্বর্যে এই ধাতু হতে ঈশ—বর= ঈশ্বর। ঈশ শব্দের অর্থ ব্যাপক, শ্রেষ্ঠ এবং বর শব্দের অর্থ প্রধান। যিনি ব্যাপক এবং শ্রেষ্ঠরও প্রধান তিনিই ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়।
ঈশ্বরঃ কারণং পুরুষকর্মাফল্যদর্শনাৎ। (ন্যায়সূত্র-৪/১/১৯)।।
অর্থাৎঃ— কর্মফলমুক্ত পুরুষই ঈশ্বর।
কে এই পুরুষ?
পুরুষ হল চৈতন্যময় সত্ত্বা। যাকে ব্রহ্ম বলা হয়— ব্রহ্ম যিনি জগৎ সৃষ্টি ও রক্ষা করে আছেন, ব্রহ্ম এই অর্থে— অ। জগৎ যাঁর দ্বারা দীপ্ত হয় এই অর্থ— ব্রহ্ম।
এক, অদ্বিতীয় দেব সর্বভূতে প্রচ্ছন্নভাবে অবস্থিত আছেন। তিনি সর্বব্যাপী, সর্বভূতের অন্তরস্থিত আত্মা, কর্মাধ্যক্ষ, সর্বভূতের নিবাসস্থান, সর্বদ্রষ্টা, চেতয়িতা নিরুপাধিক ও নির্গুণ।
(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ, ১১।। তৃতীয় অধ্যায়)
এই জগতে তাহার কোনো প্রভু নাই, নিয়ন্তাও কেহ নাই। এমন কোনও লিঙ্গ বা চিহ্ন নাই, যাহা দ্বারা অনুমান করা চলে।
(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ।। ৯।। তৃতীয় অধ্যায়)
তিনি সর্বত্র গিয়াছেন, তিনি জ্যোতির্ময়, অশরীরী, ক্ষতরহিত, স্নায়ুহীন, শুদ্ধ ও অপাপবিদ্ধ। তিনি সর্বদর্শী, সর্বজ্ঞ, সর্বোপরি বিদ্যমান এবং স্বয়ম্ভূ। তিনি নিত্যকাল ব্যাপীয়া লোকের যথাযথ কর্মফল ও সাধনা অনুসারে বিষয়সমূহের বিধান করিয়াছেন। (ঈশ উপনিষদ।। ৮।।
ব্রহ্ম এক এবং গতিহীন হয়েও মন অপেক্ষা অধিকতর বেগবান, দেবতা বা ইন্দ্রিয়সকল এঁকে পান না, কারণ ইনি সবার আগে গমন করেন। ব্রহ্ম বা আত্মা সকল শক্তিকে অতিক্রম করে যান, এই ব্রহ্মে অধিষ্ঠিত থেকে প্রাণশক্তি জগতের সমস্ত শক্তিকে ধারণ করেন।
(ঈশ উপনিষদ।। ৪।।)
‘তত্র ঈশ্বরঃ সর্বজ্ঞঃ পরমাত্মা এক এব’। (ন্যায়)।
অর্থাৎ : নিত্য পরমাত্মা বা ঈশ্বর এক ও সর্বজ্ঞ।
ক্লেশকর্ম্মবিপাকাশয়ৈরপরামৃষ্টঃ পুরুষবিশেষঈশ্বরঃ। (যোগসূত্র-১/২৪)।।
তত্র নিরতিশয়ং সর্ব্বজ্ঞত্ববীজম্ ।
(যোগসূত্র-১/২৫)।।
অর্থাৎ যিনি ঈশ্বর, তিনি সর্বজ্ঞ। তাঁতে নিরতিশয় সর্বজ্ঞত্ব-বীজ নিহিত আছে।
(যোগসূত্র-১/২৫)।।
এক্ষণে বুঝা যাচ্ছে যে ঈশ্বর হলেন সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাশালী এবং সর্বশ্রেষ্ট । তাহর ঊদ্ধে আর কিছু নেই।
যেমন সূর্য্যঃ— যদিও বা আমরা বলি সূর্য্যদেবতা (পৌরানিক মতে) কিন্তু আদি জ্ঞান হতে জানা যায় সূর্য্য পরমাত্মা সেই সর্ব শ্রেষ্ট ঈশ্বরের গুনবাচক নামক। সূর্য্য আত্মা জগতস্তস্থুষশ্চ” জগৎ অর্থাৎ প্রাণী, চেতনা এবং চলনশীল পদার্থের এবং তস্থুল অর্থাৎ অপ্রাণী বা পৃথীবি আদি স্থাবর জড় পদার্থের আত্মা স্বরুপ হওয়ার এবং স্বপ্রকাশ স্বরুপ হইয়া সকলের প্রকাশ কারক হওয়াতে ঐ পরমেশ্বরের নাম “সূর্য্য” হইয়াছে। প্রাণী ও অপ্রানী সমস্ত ভূতের ইনি চালক এবং প্রকাশক। ভূাদিগণীয় পরষ্মেপদী সৃ ধাতু কত্ত্ববাচ্যে ক্যপ প্রত্যয়ে নিষ্পন্ন। সৃ ধাতু অর্থ গতি। সূর্য্যাবর্ত্তী জ্যোতিঃ ও তেজঃ সর্ব্বত্র গমনশীল। গতির তিনটি অর্থ জ্ঞান, গমন ও প্রাপ্তি।
এই সূর্য্য যেমন শুধু এই পৃথিবী না সারা বিশ্ব ব্রহ্মান্ড আলো আর তাপপ্রদান করে বিশ্ব শাসন করছে তাই বলা যায়তে পারে বিশ্বে সূর্য্য শ্রেষ্ট আবার এই সূর্য্য আবার কালের অধীনে সমগ্র ব্রহ্মান্ড কালের আবর্তন চক্রে বাধাঁ এইখান থেকে বের হবার সাধ্য কাহারো নেই। সে যত বড় মুল্লূক হোক তাহলে সেই সূত্র হতে বলা যায় এই কালই সর্বশ্রেষ্ট। আর এই কাল হলেন স্বয়ং মহাকাল সেই পরমাত্মা শিব যিনি মঙ্গলময় আর ইনি আছেন তার নিয়ম চক্রে যাহা শাসন করে কালকে তিনি হলেন কালী।
ঈশ্বর পূর্ণরূপ চিত্র
ওঁ উচ্চারণ করতে গেলে আমরা তিনটি শব্দ পাই তা হলঃ— অ + উ + ম এই শব্দে পাওয়া যায় তিনটি মহাশক্তি ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর।
ব্রহ্ম শক্তি অভেদ। এককে মানলে, আর একটিকেও মানতে হয়। যেমন অগ্নি আর তার দাহিকা শক্তি; - অগ্নি মানলেই দাহিকা শক্তি মানতে হয়, দাহিকা শক্তি ছাড়া অগ্নি ভাবা যায় না। সূর্যেকে বাদ দিয়ে সূর্যের রশ্মি ভাবা যায় না।"
তাই এই এক ব্রহ্ম এবং শক্তিকেই আমরা বিভিন্ন নামে অভিহিত করি—
▪ পুরুষ + প্রকৃতি
▪ ব্রহ্মা + ব্রহ্মাণী (সরস্বতী)
▪ বিষ্ণু + বৈষ্ণবী (লক্ষ্মী)
▪ মহেশ্বর + মাহেশ্বরী (কালী)
তিনি এক কিন্তু রুচির বৈচিত্র্যময়তার জন্যে প্রকাশ অনন্ত।
সনাতন ধর্মানুসারে চিন্তার অতীত পরমেশ্বর যে রূপে সৃষ্টি করেন সেই রূপের নাম ব্রহ্মা, যে রূপে জগৎ পালন করেন সেই রূপের নাম বিষ্ণু এবং যে রূপে লয় বা নাশ করেন সেই রূপের নাম শিব বা মহেশ্বর। এ সহজ কথাটিই শ্রীমদ্ভাগবতের প্রথম স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়ে খুব সুন্দর করে দেয়া আছে।
"প্রকৃতির তিনটি গুণ-সত্ত্ব, রজ এবং তম। পরমেশ্বর এক হলেও এই তিনটি গুণের প্রভাবে বিশ্বের সৃষ্টি -স্থিতি-লয়ের জন্যে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর রূপ ধারণ করেন।"
ওঁ এক শক্তিকেই আমরা বিভিন্ন শাস্ত্রে বিভিন্ন নামে প্রকাশ পাই—
ওঁ
ব্রহ্মা + ব্রহ্মাণী + মহাসরস্বতী
বিষ্ণু + বৈষ্ণবী + মহালক্ষ্মী
শিব + শিবানী + মহাকালী
ব্রহ্ম + শক্তি
পুরুষ + প্রকৃতি
চন্দ্র ও চন্দ্রের কিরণ দুধ ও দুধের ধবলতার ন্যায় এক ও অভেদ।
ব্রহ্ম জগৎ সৃষ্টির এক মহাশক্তি বিষ্ণুকে জগতের সৃষ্টি পালনের। মহেশ্বরকে জগতের সৃষ্টি প্রলয়ের গুণ কর্ম অনুসারে এই তিন শক্তিকে এক সত্ত্বা পরমব্রহ্মকে এই জগতের মহাগুরু বলা হয়েছে যাকে আমরা ওঁ নামে জানি।
ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, এরাই পরব্রহ্ম স্বরূপ; সেই তিন গুণশক্তি ঈশ্বরকেই বুঝানো হয় সেই তিন শক্তিকে এক সত্ত্বা পরমব্রহ্মকে ধ্যানের মধ্যে উপাসন করি।
ব্রহ্ম শব্দের অর্থ সর্ব্ববৃহৎ। যাঁর থেকে বড় কেউ নেই যিনি সকল কিছুর স্রষ্টা এবং যাঁর মধ্যে সকল কিছুর অবস্থান ও বিলয় তিনিই ব্রহ্ম।
যে সকল কিছুই সৃষ্টি করেছেন ব্রহ্ম, সে সকল কিছুর পালন করেছেন আছেন, আর যে সবকিছুই প্রলয় করে থাকেন মহেশ্বর। ত্রিমূর্তির ভেতরে এক সত্ত্বাধিকারী পরমব্রহ্ম এই হলো চৈতন্যময় সত্ত্বা।
মহর্ষি_পতন্জলী_যোগদর্শনে
"ক্লেশকর্মবিপাকশৈয়রপরামৃষ্টঃ পুরুষবিশেষ ঈশ্বরঃ;
(যোগদর্শন, ১।২৪)
ভাবার্থঃ— ক্লেশ, কর্ম, বিপাক ও আশয় এই চারের সঙ্গে যার কোন সম্বন্ধ নেই যিনি সমস্ত পুরুষের মধ্যে উত্তম, তিনিই ঈশ্বর।
দেখুন এখানে,—
১) ক্লেশঃ— অবিদ্যা, অস্মিতা, রাগ, দ্বেষ, অভিনিবেশ।
২) কর্মঃ— পূণ্য, পাপ, পূণ্যও পাপমিশ্রিত এবং পাপ পূণ্যরহিত।
৩) বিপাকঃ— কর্মফলের নাম বিপাক।
৪) আশয়ঃ— যাবতীয় কর্ম সংস্কারের নাম আশয়।
এই চারের সাথে সমন্ধহীন উত্তম পুরুষই ঈশ্বর পদবাচ্য।
এজন্যই ঈশ্বরকে "আনন্দময় " বলা হয়েছে।
অর্থাৎ তিনি কখনো দুঃখ, ক্লেশ, কর্মফল ভোগ করেন না। তিনি সর্বদা আনন্দময় স্বরূপে স্থিত।
যদি এরূপ বলা হয় যে, ঈশ্বর পৃথিবীতে জন্মগ্রহন করেন তবে বলতে হবে তিনি তার আনন্দময় স্বরূপ থেকে বিচ্যুত হলেন। কারন জন্মগ্রহনকারীর গর্ভস্থ যন্ত্রনা, কর্মফল এবং ত্রিতাপ জ্বালা ভোগ করার প্রয়োজন পড়ে। যদি ঈশ্বর এক মুহুর্তের জন্যও তার আনন্দময় স্বরূপ থেকে বিচ্যুত হন। তবে তিনি ঈশ্বরের সঙ্গা কদাপি প্রাপ্ত হতে পারবেন না। অনেকে বলেন ঈশ্বর পৃথিবীতে জন্মগ্রহন করলেও তিনি তার স্বরূপ চ্যুত কখনো হন না। এটা অনেক বড় ভূল কথা কারণ পঞ্চভৌতিক দেহ ধারণ করলে সে দেহে জরা ব্যাধি, দুঃখ আসবেই। এমন কোন উদাহরন কেউ দিতে পারবেন না যিনি এই ভৌতিক দেহেকে এক মুহুর্তের জন্যও দুঃখ পাইনি।
ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয় তিনি এক সত্ত্বাধিকারী পরমব্রহ্ম এই হলো চৈতন্যময় সত্ত্বা আমাদের মধ্যে রয়েছেন সাকার ও নিরাকার দৃশ্যে।
ব্রহ্মের_রূপ_কি
রূপং রূপং প্রতিরূপো বভুব তদস্য রূপং প্রতিচক্ষণায় ৷
ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরূপ ঈয়তে যুক্তা হস্য হরয়াঃ শতা দশ ৷।
(ঋগ্বেদ, ৬/৪৭/১৮)
পদার্থঃ— (ইন্দ্রঃ) জীবাত্মা (রূপং-রূপং প্রতিরূপ
বভুব) প্রত্যেক প্রানির রূপে তদাকার হয়ে বিরাজমান
হন। (তত্ অস্য রূপং প্রতি চক্ষনায়) তাহা এই রূপে
আধাত্ম দৃষ্টি দ্বারা দেখায় যোগ্য। এই জীবাত্মা (সায়াভি) নানা বুদ্ধি দ্বারাই (পুরু-রূপঃ ইয়তে) নানা রূপের জানা যায়। (অস্য ইহার শাসনে, দেহ মধ্যেই (দশ শতা হরয়ঃ) দশ শত প্রানগন অশ্ব বা ভূত্যের সমান (যুক্তাঃ) যুক্ত জ্ঞান তন্তু তথা শক্তিতন্তু রূপে কাজ করে।
ওঁ শান্তি! ওঁ শান্তি! ওঁ শান্তি!
আসুন, আমরা সবাই বেদের শুভ্র জ্ঞানের পথ অনুসরন করে বৈষম্যহীন সমাজ গঠন করি।
শ্রী বাবলু মালাকার
(সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, চট্টগ্রাম)