সনাতন ধর্মের পবিত্র বেদে নারীদের কেমন সন্মান ও অধিকার দিয়েছে—
হিন্দুদের ধর্ম সর্বোবৃহৎ মানবতাবাদী ধর্ম বলা হয়েছে। কারণটা হল সনাতন ধর্মে শাস্ত্রকে বিশেষ করে পবিত্র বেদ ও বিভিন্ন শাস্ত্রে নারীদের সন্মান ও অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদা দান করা হয়েছে।
এই পোস্টটি পড়ে দেখুন আপনি নিজেই অবাক হয়ে যাবেন—
পবিত্র_বেদে_নারী
যে নারী হিন্দুশাস্ত্রে উপদেশ দেয় তিনি 'রমণী'।
হিন্দুধর্মের প্রতিটি শাস্ত্রে নারী যেমন মাতাকে যতদূর সম্ভব মহীয়সী করিয়া প্রত্যেকটি জননীকে জগজ্জননীর প্রতিমূর্ত্তি বলিয়া করা হয়।
(শ্রী শ্রী চণ্ডী, ৫/৭২-৩)
হে দেবী, জগতের সকল নারীর মাঝেই আপনার মূর্তি স্বরূপ প্রকাশ। ( শ্রী শ্রী চন্ডী ১১/৬)
নারী হলো মঙ্গলময়ী লক্ষ্মী।
(অথর্ববেদ, ৭/১/৬৪)
নারী হলো জ্ঞানের ধারক।
(অথর্ববেদ, ৭/৪৭/২)
নারী হল জ্ঞানদাত্রী ও প্রেরনাদাত্রী।
(ঋগ্বেদ, ১/৩/১১)
নারীকে উপহার হিসেবে জ্ঞান উপহার দাও।
(অথর্ববেদ, ১৪/১/৬)
পিতার সম্পত্তিতে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার রয়েছে।।
(ঋগ্বেদ, ৩/৩১/১)
গর্ভজাত সন্তান ছেলে হোক আর মেয়েই হোক তাকে সমান যত্ন করতে হবে।
(অথর্ববেদ, ২/৩/২৩)
একজন নারীর কখনো যেন সতীন না থাকে।
(অথর্ববেদ, ৩/১৮/২)
নারী শিক্ষা গ্রহণ শেষে পতিগৃহে যাবে।
(অথর্ববেদ, ১১/৫/১৮)
নারীর যেন দুঃখ কষ্ট না হয়।
(অথর্ববেদ, ১২/২/৩১)
হে নারী, মৃত পতির শোকে অচল হয়ে লাভ কি!
বাস্তব জীবনে ফিরে এসো এবং পুনরায় পতি গ্রহন করো।
(অথর্ববেদ, ১৮/৩/২)
বিধবা নারী পুনরায় পতি গ্রহণ করো।
(ঋগ্বেদ, ১০/৯৫/১৫)
নারীদের পূজা করেই সর্বত্র জাত বড় হয়েছে, যে দেশে, যে জাতে নারীদের পূজা নেই, সে দেশে সে জাত কখনো বড় হতে পারেনি, কস্মিন কালেও পারবে না। তোদের জাতের যে এত অধঃপতন ঘটেছে। তার প্রধান কারন- এইসব শক্তিমূর্তির অবমাননা করা।
(চিরজাগ্রত স্বামী বিবেকানন্দ)
যে জাতির নারী যত পবিত্র, সেই জাতি তত উন্নত। যে জাতির পুরুষ যত সংযত, সেই জাতি তত উন্নত। তোমরা প্রকৃত উন্নতি লাভ কর।
(শ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব)।
একমাত্র সনাতন হিন্দু সমাজেই নারীকে সর্ব্বোচ্চ মর্য্যাদা দান হয়ে ছিল, তাই হিন্দু সমাজেই নারীর আদর্শ ও কীর্ত্তি-গরিমা পরিপূর্ণরূপে অতুলনীয় গৌরবে বিকশিত হয়েছিল। হিন্দুসমাজে নারীর মর্য্যাদা শুধু দাম্পত্য, পারিবারিক, সামাজিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয় ; হিন্দু-সমাজে নারী দেবী, ভগবতী, বিশ্বজননী। হিন্দুর চোখে নারী শুধু স্নেহ-প্রীতি-শ্রদ্ধা-সন্মানের পাত্রী নয়; নারী দেবীরূপে পূজিতা।
(ঋষির অনুশাসন)
"যত্র নার্য্যস্ত পূজ্যস্তে রমস্তে তত্র দপবতা"
নারী যে সমাজে পূজা পান দেবতাগণ সেথায় বিরাজ করেন।
বৈদিক ধর্মে নারী অর্থাত্ 'মা' কে দেবীজ্ঞানে শ্রদ্ধা করা হয়। (তৈত্তরীয় উপনিষদ : শিক্ষাবল্লী, ১১ অনুবাক)।
বৈদিক উপনিষদের যুগে দেখতে পাওয়া যায়
মৈত্রেয়ী গার্গী প্রভৃতি প্রাতঃস্মরণীয়া নারীরা ব্রম্মবিচারে ঋষিস্থানীয়া হয়ে রয়েছেন। হাজার বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণের সভায় গার্গী সগর্বে যাজ্ঞবল্ককে ব্রম্মবিচারে আহবান করেছিলেন।
মনের নিয়ন্ত্রণঃ— মন দি–রকমের। শুদ্ধ–অশুদ্ধ; পবিত্র–অপবিত্র। কামনা–বাসনা, ভোগ–লালসার যাবতীয় সঙ্কল্প বা ইচ্ছা হলো অশুদ্ধ মনের। আর শুদ্ধ বা পবিত্র মনের কোনো লৌকিক কামনা–বাসনা নেই।
(অমৃতবিন্দু উপনিষদ, ১)
আত্মা নারীও নন, পুরুষও নন এবং নপুংসকও নন। (কর্মের ফলে) আত্মা বিভিন্ন শরীর ধারণ করেন এব্য সেই সেই রূপেই তিনি পরিচিত হন।
(শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ, ৫/২০)
(ব্রহ্ম) তুমি নারী, তুমিই পুরুষ; তুমি বালক, বালিকাও তুমি; তুমিই বৃদ্ধ, তুমিই নানা রূপে জন্ম নাও।
(শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ, ৪/৩)
আত্মাতে নর–নারী ভেদ নেই। দেহে সম্বন্ধেই নর–নারী ভেদ। অতএব আত্মাতে নারী–পুরুষ ভেদ আরোপ করা ভ্রমমাত্র—শরীর সম্বন্ধেভ তা সত্য। অজ্ঞানই বন্ধনের কারণ।
#এই_জ্ঞানলাভের_উপায়_কী?
ভগবানের মন্দিরজ্ঞানে সর্বভূতে প্রেমের দ্বারা সেই জ্ঞানলাভ হয়। তিনি সর্বভূতে অবস্থান করেন।
(চিরজাগ্রত স্বামী বিবেকানন্দ)
অন্যকে প্রেম ও সহানুভূতির চোখর দেখতে হবে। আমরা যে –পথ দিয়ে এসেছি তারাও সেই পথ দিয়ে চলছে। যদি তুমি বাস্তবিক পবিত্র হও, তবে তুমি অপবিত্রতা দেখবে কীভাবে? কারণ যা ভিতরে অপবিত্রতা না থাকলে বাইরে কখনোই অপবিত্রতা দেখতে পেতাম না।
(চিরজাগ্রত স্বামী বিবেকানন্দ)
ঋষিগণ নারীদেহের আকর্ষণীয় বস্তুগুলির অসারত্ব বিশ্লেষণ করিয়া দেখাইয়াছেন।
(নারদ-পরিব্রাজক উপনিষদ, ৪/২৯-৩০)
—[স্ত্রীণামবাচ্যদেশস্য...কিমতঃপরম্']
— যে উহাতে আকৃষ্ট হইবার কিছুই নাই।
[যাজ্ঞবল্ক্যােপনিষদ্ যজু (৮–১৬)]
—'মাংসপাঞ্চালিকায়াস্তু দুঃখশৃঙ্খলয়া নিত্যমলমস্তু মম স্ত্রিয়া'], কিন্তু এরূপ চিত্তবিক্ষেপকারী মোহও আর কিছু নাই।
সুতরাং সন্ন্যাসী বা যোগী, যিনি একমাত্র ভগবৎ চিন্তায় নিজেকে যুক্ত রাখিযা মুক্ত হইতে চান, তিনি যদি নারীমূর্ত্তির একটি কাষ্ঠপুত্তলিকা দেখিতে পান তবে তাহাকে পদ দ্বারাও স্পর্শ করিবেন না।
নারীর সহিত দৈহিক সম্বন্ধ শুধু রাখিবে পঞ্চযজ্ঞে।
(পৃষ্ঠা - ১১১)
#সত্যজ্ঞানের_জন্য_বলা_হয়েছে
সত্যমেব জয়তে নানৃতং সত্যেন পন্থা বিততো দেবযানঃ।
(মুণ্ডকোপনিষদ, ৩/১/৬)
অনুবাদঃ— একমাত্র সত্যেরই জয় হয়, মিথ্যার নয়। কারণ, সেই দেবযান নামক পথ সত্যের দ্বারা লাভ করা যায়।
তুচ্ছানাং যদ কুলশ্চ, নারীনাং এব ভবেৎ।
বিনাশং স কুলধর্ম অধোগতিম প্রাপ্সসি এতৎ।।
অনুবাদঃ— এই জগতে যে কুল বা সমাজে নারীদের তুচ্ছজ্ঞান করে, সে কুল বা সমাজ ধর্মভ্রষ্ট হয়ে নরকগামী হয়।।
দেশ ও নারী দুটোকেই মাতৃস্বরূপ দেখা উচিত।
#পণ্ডিত_শ্রীপাদ_দামোদর_সাত_বালেকারের
"Simple translation of Rigveda" বইয়ের পৃষ্ঠা ২২১ থেকে ১৪৭ ঋগ্বেদের মন্ত্রের সারমর্ম তুলে ধরছি—
১) নারীদের সাহসী হতে হবে! (পৃষ্ঠা ১২২-১২৮)
২) নারীদের বিভিন্ন কাজে অভিজ্ঞ হতে হবে!
(পৃষ্ঠা - ১২২)
৩) নারীদের যশ অর্জন করতে হবে! (পৃষ্ঠা - ১২৩)
৪) নারীদের রথে (যানবাহনে) উঠা শিখতে হবে!
(পৃষ্ঠা - ১২৩)
৫) নারীদের মেধাবী হতে হবে! (পৃষ্ঠা - ১২৩)
৬) নারীদের বিত্তবান ও উন্নতির কথা ভাবতে হবে!
(পৃষ্ঠা - ১২৫)
৭) নারীদের বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী হবে হবে! (পৃষ্ঠা - ১২৬)
৮) নারীরা সংসার ও সমাজ রক্ষা করবেন ও সেনাবাহিনীতে অংশগ্রহণ করবেন! (পৃষ্ঠা ১৩৪-৩৬)
৯) নারীদের আলোকিত হতে হবে! (পৃষ্ঠা - ১৩৭)
১০) নারীদের বিত্ত খাবার ও উন্নতির বাহক হতে হবে! (পৃষ্ঠা ১৪১-৪৬)
নারীদের অপমান করা মানে নিজের মা বোনকে অপমান করা। আর হিন্দু সমাজে নারীর মর্য্যাদা অতুলনীয়।
সনাতন ধর্মে একসময় নারীদের বেদ শাস্ত্রপাঠ ছিল। আসুন, বেদের শুভ্র, জ্ঞানের পথ অনুসরন করে বৈষম্যহীন সমাজ গঠন করি।
ওঁ শান্তি! ওঁ শান্তি! ওঁ শান্তি!
শ্রী বাবলু মালাকার
(সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, চট্টগ্রাম)