★সনাতন ধর্ম হাজার বছরে তিল তিল করে গড়ে ওঠা একটি ধর্ম। মানুষের জীবনের প্রত্যেকটি কাজের ব্যাপক পর্যালোচনার পরই ঋষিগণ একটি করে নিয়ম দিয়ে দিয়েছেন। এটা কয়েক বছরে বসে তৈরি করা সংবিধান নয় যে তা সর্বসময়ের জন্য অনুপযোগী বা ব্যবহারিক কর্মের বিধানের স্বল্পতা এতে রয়েছে। তাই সকল বিষয়ে রয়েছে এর সুনির্দিষ্ট পথ।
★কোন গোষ্ঠী বা দল কোন মাঙ্গলিক কাজ শুরুর পূর্বে কি বলছে তা তাদের গোষ্ঠীগত বিষয় কিন্তু সনাতন ধর্ম বলছে প্রত্যেক কাজের পূর্বে- ‘ওঁ তৎ সৎ’ বলে শুরু করতে। তাই সকলকে এক নির্দেশ মেনে চলা উচিত।
-দেখা যাক এসম্পর্কে শাস্ত্র কি বলে-
★ওঙ্কার দ্বারাই সমস্ত শব্দ-জগৎ পরিব্যপ্ত। ‘ওম’ এই শব্দটি সম্মতিজ্ঞাপক বলিয়া পরিচিত। ‘ওম শ্রবণ করাও’ এই বলিয়া যাজ্ঞিকেরা দেবতাদিগকে মন্ত্র শ্রবণ করাইয়া থাকেন; সামবেদীরা ‘ওম’ উচ্চারণপূর্বক সামগান করিয়া থাকেন। স্তোত্র পাঠকগণ ‘ওম শোম’ বলিয়া শস্ত্রনামক স্তোত্রসমূহ পাঠ করেন। যজুর্বেদিগণ প্রতিকর্মে ‘ওম’ উচ্চারণ করেন। ব্রাহ্মণগণ ‘ওম’ বলিয়া বেদাধ্যয়ন আরম্ভ করেন।
তৈত্তিরীয় উপনিষদ, ১/৮/১
★‘ওম’ এই অক্ষরকে উদগীথরূপে উপাসনা করিবে; কারণ প্রথমে ‘ওম’ শব্দ উচ্চারণ করিয়া পরে উদগীথ গান করা হয়। ছান্দোগ্য উপনিষদ, ১/১/১
★‘ওম’ উচ্চারণ করিয়া শ্রবণ করান হয়; ‘ওম’ উচ্চারণ করিয়াই মন্ত্রপাঠ করান হয় … ছান্দোগ্য উপনিষদ, ১/১/৯
★‘ওঁ তৎ সৎ’ এই তিন প্রকার পরমব্রহ্মের নাম নির্দেশ করা হইয়াছে। গীতা, ১৭/২৩
★এই হেতু ব্রহ্মবিদগণ শাস্ত্রোক্ত কর্মে সর্বদা ‘ওঁ’ উচ্চারণ করেন। যাহারা মোক্ষ কামনা করেন, তাহারা ফল কামনা ত্যাগ করিয়া ‘তৎ’এই শব্দ উচ্চারণপূর্বক বিবিধ যজ্ঞ তপস্যা ও দানক্রিয়ার অনুষ্ঠান করেন। কোন বস্তুর শ্রেষ্ঠত্ব নির্দেশনার্থ ‘সৎ’ শব্দ প্রযুক্ত হয়; মঙ্গলকর্মেও ‘সৎ’ শব্দ ব্যবহৃত হয়। গীতা, ১৭/২৪-২৬
★ওঁ = অ, উ, ম। সংস্কৃত ভাষায় প্রত্যেক বর্ণের মাধ্যমে একটি করে শব্দ বোঝায়। যেমন : ক-তে সূর্য, খ-তে আকাশ। আর অ, উ, ম দিয়ে যথাক্রমে সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়রূপ ব্রহ্মবাচকতা বুঝায়। আর সন্ধির নিয়মানুয়ায়ী অ+উ=ও আর সাথে ‘ম’ নিয়ে ‘ওম’ অথবা ‘ওঁ’, সংস্কৃত যা সিম্বলিক।
‘ওঁ তৎ সৎ’ এই সংকল্প দ্বারাই সমস্ত কাজ করতে হয়। অর্থাৎ সর্বকর্মই পরমাত্মাকে স্মরণ করে ঈশ্বরার্পণ-বুদ্ধিতে করা উচিত।
Article credit:Sanatan dharma