গুজরাটের কাভি কাম্বোইয়ের স্তম্ভেশ্বর মহাদেব নামের শিব মন্দিরটির বয়স প্রায় ১৫০ বছর। আরব সাগর আর ক্যাম্বি উপসাগরের মাঝামাঝি এর অবস্থান। আপাতদৃষ্টিতে এই মন্দিরের মধ্যে কোনও বিশেষত্ব নেই। কিন্তু এর বিশিষ্টতা টের পাওয়া যায়, যখন সমুদ্রে জোয়ার আসে। কারণ তখন সম্পূর্ণ সমুদ্রের জলের তলায় চলে যায় এই মন্দির। আবার জোয়ার চলে যাওয়ার পর যখন জলস্তর নামতে শুরু করে, তখন একটু একটু করে জল থেকে মন্দিরটি জেগে ওঠে।
সমুদ্রের জলে মন্দিরের সম্পূর্ণ নিমজ্জন এবং তারপর আস্তে আস্তে তার জলমুক্তির দৃশ্য— স্বভাবতই এক অলৌকিক অভিজ্ঞতা ভক্ত ও দর্শনার্থীদের কাছে। দূর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থী ও ভক্তরা এই দৃশ্য দেখার জন্য উপস্থিত হন মন্দিরে। এই মন্দিরের রীতি হল, ভক্তরা সকাল সকাল চলে যান মন্দিরে, পূজার্চনা সেরে নেন। তারপর শুরু হয় তাঁদের অপেক্ষা। সেই সময়টা কেউ কেউ সমুদ্রের শোভা উপভোগ করেন, কেউ বা মন্দিরে বসেই ঈশ্বরচিন্তায় নিমগ্ন হন। তারপর জোয়ারের সময় এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকা হয়ে আসতে থাকে মন্দির চত্বর।
ভক্ত ও দর্শনার্থীরা নিরাপদ দূরত্বে সরে যান। তাঁদের চোখের সামনে শুরু হয়ে যায় আশ্চর্য প্রাকৃতিক লীলা। জোয়ারের জল বাড়তে বাড়তে গ্রাস করে ফেলে পুরো মন্দিরটাকেই। তখন সেদিকে তাকালে মন্দিরের অস্তিত্ব পর্যন্ত চোখে পড়ে না। কিছুক্ষণ কাটে এইভাবে। তারপর আবার সরে যেতে থাকে জোয়ারের জল। জলের উপরে প্রথমে দৃশ্যমান হয় মন্দিরের চূড়া। তারপর আস্তে আস্তে গোটা মন্দিরটাই জেগে ওঠে জল থেকে। সাময়িকভাবে মন্দিরটি মানবদৃষ্টির সম্পূর্ণ আড়ালে চলে যায় বলেই একে অনেকে ‘অদৃশ্য মন্দির’ বলে থাকেন।
ভক্তেরা গোটা বিষয়টিকেই ঐশ্বরিক লীলা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তাঁদের ধারণা, স্বয়ং ব্রহ্মা এইভাবেই প্রকৃতির মাধ্যমে মহাদেবের জল-অভিষেক ঘটিয়ে থাকেন। তবে বিজ্ঞানীদের মতে, বিষয়টি সাধারণ প্রাকৃতিক নিয়ম মাত্র। তবে ঘটনার নেপথ্য কারণ যা-ই হোক, প্রতিদিন এইভাবে সমুদ্রজলে নিমজ্জিত হওয়ার পরেও মন্দির ও তাঁর অভ্যন্তরস্থ শিবলিঙ্গটি সম্পূর্ণ অক্ষত রয়ে গিয়েছে, এটাও যে কম বিস্ময়কর ঘটনা নয়, তা মানছেন বিজ্ঞানীরাও।