ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পালনের সম্পূর্ণ মাহাত্ম্য



ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মের মহাপবিত্র তিথির নামই জন্মাষ্টমী। এ জন্মাষ্টমী তিথিতেই উদযাপিত হয় জন্মাষ্টমী ব্রত। এ ব্রত সম্পর্কে স্কন্দ পুরাণে বলা আছে- জন্মাষ্টমী ব্রত স্ত্রীপুরুষ নির্বিশেষে সকল মানবেরই প্রতিবছর করা কর্তব্য। এই ব্রত করিলে সন্তান, সৌভাগ্য, আরোগ্য, অতুল আনন্দ এবং ধার্মিকতা প্রভৃতি ইহকালে লাভ করে পরকালে স্বর্গপ্রাপ্তি হয়ে থাকে। স্কন্দপুরাণে আরো লিখিত আছে জন্মাষ্টমী ব্রতে চতুর্বর্গ ফল লাভ হয়।

স্মার্ত অর্থাৎ স্মৃতিশাস্ত্রের অনুসারী আমরা সাধারণ হিন্দুরা এবং বৈষ্ণবদের মধ্যে জন্মাষ্টমী নিয়ে সামান্য মতভেদ দেখা যায়। আমাদের বাঙালীর অধিকাংশ শাস্ত্রীয় বিধান শ্রীরঘুনন্দনকে অনুসরণ করেই করা। জন্মাষ্টমী বিষয়ে শ্রীরঘুনন্দনের মতামত হলো-
"যেদিন জয়ন্তীযোগ (নিশীথ সময়ের পূর্বদণ্ডে বা পরদণ্ডে কলামাত্রও রোহিণীনক্ষত্রের যুক্ত হওয়া) হয়, সেই দিনই জন্মাষ্টমী ব্রত করিতে হয়, কিন্তু দুইদিনব্যাপী ঐ যোগ হলে পরের দিনে জন্মাষ্টমী ব্রত হয়ে থাকে। জয়ন্তীযোগ না হলে রোহিণীযুক্ত অষ্টমীতে জন্মাষ্টমী ব্রত অনুষ্ঠিত হয়। দুইদিনেই যদি রোহিণী নক্ষত্রযুক্ত অষ্টমী হয়, তা হলে পরদিনে, রোহিণী যোগ না হলে যেদিন নিশীথ সময়ে অষ্টমী থাকবে, সেই দিনেই জন্মাষ্টমী ব্রত করতে হবে।
উভয় দিনে নিশীথ সময়ে অষ্টমী পাইলে বা একদিনেও না পাইলে পরদিন জন্মাষ্টমী ব্রত করা কর্তব্য।"

তবে বৈষ্ণব পঞ্জিকা মতে বিশেষ করে হরিভক্তিবিলাস অনুসারে - যে দিন পলমাত্র সপ্তমী , যেদিন জন্মাষ্টমী ব্রত হয় না। নক্ষত্রের যোগ না থাকিলেও নবমীযুক্ত অষ্টমী গ্রাহ্য, কিন্তু সপ্তমীবিদ্ধা অষ্টমী নক্ষত্রযুক্ত হলেও অগ্রাহ্য।
জন্মাষ্টমীর উপবাস অষ্টমী /নবমীতে পালন নিয়ে মতানৈক্য হলেও শ্রীকৃষ্ণের জন্মের তিথি অষ্টমী নিয়ে কোন মতানৈক্য নেই। শ্রীকৃষ্ণের জন্ম রোহিনী নক্ষত্র যুক্ত অষ্টমীতে এটা সর্বশাস্ত্র এবং সর্বজন সম্মত।
শ্রীমদ্ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কথা বলা শুরু করেছেন দ্বিতীয় অধ্যায় সাংখ্যযোগের ২নং শ্লোক থেকে, এই শ্লোকে ভগবান অর্জুনকে অনার্য জনোচিত, স্বর্গহানিকর,অকীর্তিকর মোহ ত্যাগ করতে বলেছেন। এর ঠিক পরের ৩ নং শ্লোকেই ভগবান দৃঢ়কন্ঠে ঘোষণা করেছেন-
ক্লৈব্যং মাস্ম গমঃ পার্থ নৈতৎ ত্বয়্যুপপদ্যতে।
ক্ষুদ্রং হৃদয়দৌর্বল্য ত্যক্ত্বোত্তিষ্ঠ পরন্তপ।।
(শ্রীমদ্ভগবদগীতা: ০২.০৩)

হে অর্জুন হৃদয়ের ক্ষুদ্র দুর্বলতা ত্যাগ করে উঠে দাঁড়াও ;এমন ক্লীবতা কাপুরুষতা তোমার শোভা পায় না।
শ্রীমদ্ভগবদগীতায় শ্রীকৃষ্ণের মুখে বলা প্রথম শ্লোকগুলি এবং সঞ্জয়ের মুখে বলা গীতার শেষ শ্লোকটি খুবই তাৎপর্যময়, মাহাত্ম্যপূর্ণ এবং ইঙ্গিতবহ ; যে কথাগুলি বর্তমানে হিন্দুজাতির জন্যে খুবই প্রাসঙ্গিক।
যত্র যোগেশ্বরঃ কৃষ্ণো যত্র পার্থো ধনুর্ধরঃ।
তত্র শ্রীর্বিজয়ো ভূতিধ্রুর্বা নীতির্মতির্মম।।
(শ্রীমদ্ভগবদগীতা:১৮.৭৮)

যেখানেই যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং ধনুর্ধারী রক্ষাকারী পার্থ থাকবে; সেখানেই সর্বদা শ্রী, বিজয়, উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি এবং ঐক্যবদ্ধতার অখণ্ডিত রাজনৈতিক নীতি সর্বদাই বিরাজ করবে।
শুধুমাত্র ধর্ম ধর্ম করলেই হবে না; ধর্মকে রক্ষাকারী সক্রিয় ধনুর্ধারী পার্থদেরও প্রয়োজন আছে। তাই মহাভারতের বনপর্বের ধর্ম নিয়ে হিরন্ময় শ্লোকটি আমাদের সকলেরই জীবনে সর্বাগ্রে বাস্তবায়ন এবং অনুধাবন করা প্রয়োজন।
ধর্ম এব হতো হন্তি ধর্মো রক্ষতি রক্ষিতঃ।
(মহাভারত : বন ৩১২.১২৮)

যদি তুমি ধর্মকে রক্ষা করো, তবে ধর্মই তোমাকে সকলদিক থেকে রক্ষা করবে ; পক্ষান্তরে যদি তুমি ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ে যাও, তবে ধর্মই তোমাকে নির্মমভাবে বিনাশ করবে। তাই সদা ধর্মের আশ্রয়েই থাকো ।
আগামী ২৩ আগস্ট ,২০১৯,শুক্রবার
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতাররূপ পরিগ্রহের পবিত্র তিথিতে তাঁর শ্রীচরণে কোটি কোটি প্রণাম জানাই। 
জয় শ্রীকৃষ্ণ! জয় সনাতন!
শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী



শুভ জন্মাষ্টমী!



সবাইকে শ্রীকৃষ্ণসম্বৎ ৫২৪৫ এর শুভেচ্ছা!
নবীনতর পূর্বতন