শ্রাবণী পূর্ণিমা বা শ্রীকৃষ্ণের ঝুলনযাত্রার দিনেই আয়োজিত হয় বৈশ্বিক সৌভ্রাতৃত্বের পবিত্র উৎসব রক্ষাবন্ধন বা রাখিবন্ধন। দিনটিকে বিশ্ব সংস্কৃত দিবস হিসেবেও পালন করা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই এ শ্রাবণী পূর্ণিমাতিথি থেকেই বেদাদি শ্রাস্ত্রগ্রন্থ পাঠ শুরু হতো; সেই বিষয়কে স্মরণে নিয়ে ১৯৬৯ সাল থেকেই এ দিনটি বিশ্ব সংস্কৃত দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
রক্ষাবন্ধন সাধারণত উত্তর, পশ্চিম এবং দক্ষিণ ভারতেই পালিত হয়। বাঙালিরা সাধারণত ভাইবোনের পবিত্র এ উৎসবটি পালন করে কালীপূজার দুইদিন পরে ভাইফোঁটার দিনে। বঙ্গভঙ্গের পরে সকলকেই এক করার জন্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই প্রথম এ দিনটিকে ভাইবোনের গণ্ডি পেরিয়ে সর্বজনীন ভ্রাতৃত্ববোধের উৎসবে পরিনত করে তোলে। সে থেকেই দিনটি বাঙালির জীবনের এক গুরুত্ববহ অচ্ছেদ্য হয়ে আছে।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী সরকার ১৯০৫ সালের ২০ জুলাই বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে এবং সে বছরের ১৬ অক্টোবর থেকে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করার ঘোষণা দেয়া হয়। বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে সরব হন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ কোলকাতা কেন্দ্রিক প্রায় সকল বুদ্ধিজীবী। বাংলাকে ভাগ করার চক্রান্তের প্রতিবাদে ১৬ অক্টোবর, ৩০ আশ্বিন বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করার দিনে সকল বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করতে এক সর্বজনীন রাখিবন্ধনের ডাক দেয়া হয়।
সকলে মিলে গঙ্গায় স্নান করে শুরু হয় রাখিবন্ধন উৎসব। সকল বাঙালি সম্প্রীতির নিদর্শনস্বরূপ একে অন্যের হাতে বেধে দেন রাখিবন্ধনের হলুদ, রঙিন সুতা। রাখিবন্ধনকে উপলক্ষ করে বাঙালির ঐক্য, বাঙালির সাধনা, বাঙালির সংস্কৃতি, বাঙালির আশা আকাঙক্ষা চিত্রিত করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখলেন একাধিক অনন্য স্বদেশী গান। যা চিরকালের জন্যে বাঙালির অক্ষয় সম্পদে পরিনত হয়েছে। এ ঐক্যের স্বদেশী গানগুলি রাজধানী কলকাতা ছাপিয়ে সারা বাংলা জুড়ে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পরেছিলো।
এর মধ্যে একটি গান জনপ্রিয়তায় সকলকেই ছাপিয়ে গিয়ে সবার কণ্ঠে কণ্ঠে ধ্বনিত হতে থাকে:
এর মধ্যে একটি গান জনপ্রিয়তায় সকলকেই ছাপিয়ে গিয়ে সবার কণ্ঠে কণ্ঠে ধ্বনিত হতে থাকে:
"বাংলার মাটি, বাংলার জল,
বাংলার বায়ু, বাংলার ফল-
পুণ্য হউক, পুণ্য হউক,
পুণ্য হউক হে ভগবান॥
........
বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন,
বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন-
এক হউক, এক হউক,
এক হউক হে ভগবান॥"
এ বঙ্গভঙ্গের রেশ বিংশ শতাব্দীর ৩০ দশক পর্যন্ত সক্রিয় ছিলো, যার প্রভাব বাংলার হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে অনেকেরই জীবনেই ছিলো। কাজী নজরুল ইসলামও বঙ্গভঙ্গের অভিঘাতে উৎপন্ন তীব্র ব্রিটিশ বিরোধী স্বদেশীয় আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।
রক্ষাবন্ধনের পবিত্র সংস্কৃত শ্লোকটি হলো-
येन बद्धो बली राजा दानवेन्द्रो महाबलः ।
तेन त्वामभिबध्नामि रक्षे मा चल मा चल ।।
আমি সকলের পাঠের সুবিধার্থে এই শ্লোকের সঠিক উচ্চারণটি তুলে দিচ্ছি:
য়েন বদ্ধো বলী রাজা দানবেন্দ্রো মহাবলহ।
তেন তোয়াম্ অভিবধনামি রক্ শে মা চলো মা চলো।
যেই রক্ষাবন্ধন দিয়ে মহাশক্তিশালী দানবেন্দ্র মহারাজা বলীকে বাধা হয়েছে, সেই পবিত্র রক্ষাবন্ধন সূত্র দিয়ে আমি তোমাকে বেধেছি ; যা সর্বদা তোমাকে রক্ষা করবে।
সবাইকেই শ্রাবণী পূর্ণিমা, শ্রীকৃষ্ণের ঝুলনযাত্রা, সৌভ্রাতৃত্বের পবিত্র উৎসব রক্ষাবন্ধন এবং বিশ্ব সংস্কৃত দিবসের অগ্রিম শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা!
সবাইকেই শ্রাবণী পূর্ণিমা, শ্রীকৃষ্ণের ঝুলনযাত্রা, সৌভ্রাতৃত্বের পবিত্র উৎসব রক্ষাবন্ধন এবং বিশ্ব সংস্কৃত দিবসের অগ্রিম শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা!
শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী