উত্তরপ্রদেশের মথুরা জেলার একটি বিখ্যাত প্রাচীন শহর মথুরা। নিউ দিল্লী থেকে রেলপথে দূরত্ব প্রায় ১৫৭ কি.মি. ও স্থলপথে দূরত্ব প্রায় ১৬২ কি.মি.। আগ্রা থেকে দূরত্ব তুলনামূলক ভাবে অনেক কাছে, স্থলপথে প্রায় ৫৭ কি.মি এবং রেলপথে ৬০ কি.মি.। মথুরার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। রামায়ণ ও মহাভারতের মতন মহাকাব্যে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। বিশেষত যদু বংশীয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান হিসেবেই এই মথুরা আজও বিখ্যাত এবং সেই সঙ্গে তাঁর লীলাক্ষেত্র হিসেবে বৃন্দাবন সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
মথুরা মিউজিয়ামে রক্ষিত কিছু ফলক পাঠোদ্ধার করে জানা যায় এই শহরের প্রাচীনত্ব। ইক্ষাকু বংশের রাজা শত্রুঘ্ন কুখ্যাত অসুর লবণাসুর-কে বধ করে এই মথুরা অধিকার করেন। তখন এই মথুরা ঘন জঙ্গল দ্বারা বেষ্ঠিত ছিল এবং পরবর্তীকালে এই স্থানের নামকরণ করা হয় ‘মধুবন’। আরও পরে মধুবন থেকে নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করা হয় ‘মধুপুর’ এবং অবশেষে আজকের মথুরা। আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া মথুরা শহরের খননের পর আবিস্কার করে এই শহরের অস্তিত্ব ১১০০-৭০০ BCE তে গাঙ্গেয় সমতল ভূমি এবং ঘাগরা-হাকরা উপত্যকা এর অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা কিনা লৌহ যুগের সমকালীন। এই সভ্যতাকে তখন বলা হত “পেইন্টেড গ্রে ওয়্যার কালচার” ( Painted Grey Ware Culture বা PGW)। পরবর্তীকালে ৭০০-২০০ BCE সময়কালে এই শহর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় “শহুরে লৌহ যুগ সভ্যতা” বা “Urban Iron Age Culture” –এর সাথে। এই সভ্যতাকে তখন বলা হত “নর্দান ব্ল্যাক পলিশড ওয়্যার” বা সংক্ষেপে NBPW বা NBP ।
৬০০ BCE –তে এই মথুরা শহর সুরসেনা রাজবংশের অধীনে চলে আসে। পরবর্তীকালে ৪০০-২০০ BCE তে মৌর্য রাজবংশ এবং ২০০ BCE –এর পর শুঙ্গ রাজবংশ ও এই অঞ্চলের শাসনকর্তা ছিলেন। এমনকি ৩০০ BCE –তে মেগাস্থিনিসের ভারত ভ্রমণের বর্ণনাতেও এই মথুরার নামোল্লেখ পাওয়া যায়, অবশ্য তখন মেগাস্থিনিস এই অঞ্চলের নাম উল্লেখ করেছিলেন “মেথরা” –এই ভাবে। ১৩০ খ্রীষ্টাব্দের (বা Common Era) লিপি থেকে জানা যায় কুষান শাসক কণিষ্ক এই অঞ্চলের শাসনকর্তা ছিলেন।