শ্রীকৃষ্ণের ১৬১০৮ স্ত্রী!

শ্রীকৃষ্ণের বহুবিবাহ সম্পর্কে প্রচলিত গল্প এই যে, শ্রীকৃষ্ণের প্রধান মহিষী বা স্ত্রী ছিলো ৮ জন এবং আসামের রাজা নরকাসুরের অন্তঃপুর থেকে উদ্ধার করা স্ত্রীর সংখ্যা ছিলো ১৬,১০০ জন; সব মিলিয়ে শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রীর সংখ্যা ১৬,১০৮।

এই কথা শুনেলই তো প্রথমত যেকোনো হিন্দুর মাথা হেট হয়ে যায়, হিন্দু ধর্মের প্রধান পুরুষ শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে তাদের আর কোনো গর্ব করার জায়গা থাকে না। আর এই তথ্যকে সামনে এনে মুসলমানরাও যুক্তি দেখায় যে, কৃষ্ণ যদি ১৬ হাজার বিয়ে করতে পারে, তাহলে আমরা চারটা বিয়ে করতে পারবো না কেনো?

আরো পড়ুন - জন্মাষ্টমী কি ও কেন!


আর প্রকৃত তথ্য না জেনে, এইসব প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বা শ্রীকৃষ্ণের বহু বিবাহের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে গিয়ে আমরা হিন্দুরাও নানা রকম ন্যায় ও যুক্তি সঙ্গত গল্পের অবতারণা করার চেষ্টা করে থাকি, বাস্তবে যার কোনো প্রয়োজনই নেই; কারণ, শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী ছিলো মাত্র এক জন, সে রুক্মিনী। অপর ১৬,১০৭ জন সম্পর্কে যে গল্প, তা যে ডাহা মিথ্যা, তা এই পোস্ট পড়ার পর বুঝতে পারবেন।

এই পোস্টে প্রথমে আমি শ্রীকৃষ্ণের তথাকথিত প্রধান ৮ জন মহিষী সম্পর্কে পোস্টমর্টেম করবো, তারপর ১৬,১০০ জন সম্পর্কে বলে আমার পোস্টের ইতি টানবো, যার মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন, হিন্দু ধর্মের এক মহান সত্য সম্পর্কে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক :

বিষ্ণু পুরাণের ৪ অংশের ১৫ নং অধ্যায়ের ১৯ নং শ্লোকে আছে,

“ভগবতোহপ্যত্র মর্ত্যলোকেহবতীর্ণস্য।
ষোড়শসহস্রাষণ্যেকোত্তরশতা ধিকানি স্ত্রীণামভবন।।

এর সরল অর্থ শ্রীকৃষ্ণের ষোলহাজার একশত স্ত্রী। কিন্তু বিষ্ণুপুরাণের ৫ অংশের ২৮ নং অধ্যায়ে বলা আছে,
“অন্যাশ্চ ভার্যাঃ কৃষ্ণস্য বভূবুঃ সপ্ত শোভনাঃ”
“ষোড়শাসন্ সহস্রাণি স্ত্রীণামন্যানি চক্রিণঃ।”

এই দুই শ্লোকের অর্থ হলো কৃষ্ণের মোট স্ত্রীর সংখ্যা ষোল হাজার সাত জন। এর মধ্যে ষোল হাজার বা ষোল হাজার একশ জন হলো হলো কথিত নরকাসুরের অন্তঃপুর থেকে উদ্ধারকৃত নারী, এদের সম্পর্কে পোস্টের শেষে বলবো বলে শুরুতেই উল্লেখ করেছি, তাই এখন এই ৭ বা ৮ জনের মীমাংসা টা করে নিই।

শ্রীকৃষ্ণের ১৬১০৮ স্ত্রী!, কৃষ্ণের স্ত্রী সংখ্যা

আরো পড়ুন - লীলা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ!


বিষ্ণুপুরাণ বলছে, নরকাসুরের অন্তঃপুরের নারীরা বাদে কৃষ্ণের স্ত্রী ৭ জন, কিন্তু একই অধ্যায়ে একটু পরেই বিষ্ণুপুরাণ শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রীদের যে তালিকা দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে ৮ জনের কথা, তার মধ্যে আবার শ্রীকৃষ্ণের প্রথম স্ত্রী রুক্মিনী নেই, দেখে নিন সেই তালিকা-

“কালিন্দী মিত্রবিন্দা চ সত্যা নাগ্নজিতী তথা।
দেবী জাম্ববতী চাপি রোহিণী কামরূপিণী ||
মদ্ররাজসুতা চান্যা সুশীলা শীলমণ্ডনা।
সাত্রাজিতী সত্যাভামা লক্ষ্মণা চারুহাসিনী |

এখানে রুক্মিনী ছাড়া অন্য যে আটটি নাম আছে, সেগুলো হলো-

১.কালিন্দী, ২.মিত্রবিন্দা, ৩.নগ্নজিতকন্যা সত্যা, ৪.জাম্ববতী, ৫.রোহিনী, ৬.মদ্ররাজের কন্যা সুশীলা, ৭.সত্রাজিত কন্যা সত্যভামা ও ৮.লক্ষণা।

কিন্তু বিষ্ণুপুরাণের ৪র্থ অংশের ‍১৫ অধ্যায়ে আছে,

“তাসাঞ্চ রুক্মিণী-সত্যভামাজাম্ববতী
জালহাসিনীপ্রমুখা অষ্টৌ পত্ন্যঃ প্রধানাঃ।”

এখানে সব নাম পাওয়া গেল না, কিন্তু নতুন নাম পাওয়া গেলো “জালহাসিনী”, এর মধ্যে রুক্মিণীর নামও আছে এবং সব মিলিয়ে বিষ্ণুপুরাণ এখানে বলছে, কৃষ্ণের স্ত্রীর সংখ্যা ৮ জন। কিন্তু উপরের ৮ জন এবং রুক্মিণী ও জালহাসিনী সহ কৃষ্ণের স্ত্রীর সংখ্যা হয় ১০ জন। পুরাণের মনগড়া তথ্যগুলোর প্রতি খেয়াল রাখা শুরু করুন।

মহাভারত ছাড়া, কৃষ্ণ সম্পর্কে যেসব গ্রন্থ থেকে জানা যায়, সেগুলো হলো- বিষ্ণুপুরাণ, ভাগবত পুরাণ এবং হরিবংশ। উপরে বিষ্ণুপুরাণের শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী সম্পর্কিত তথ্য সম্পর্কে জানালাম, এবার দেখুন হরিবংশের অবস্থা কী ?
নবীনতর পূর্বতন