ব্রহ্ম এবং তাঁর শক্তি অভেদ। চিন্তার অতীত ব্রহ্মই যখন ক্রিয়াশীল হয়ে সৃষ্টি, পালন এবং লয়ে অংশগ্রহণ করে তখন তাকেই আমরা শক্তি বা আদ্যাশক্তি বলি। জগতের সকল কিছুর মূলেই এ ব্রহ্মরূপা আদ্যাশক্তি। তিনিই সৃষ্টি করেন, তিনিই পালন করেন আবার তিনিই লয় বা ধংস করেন।
'ব্রহ্ম-শক্তি'র অভেদ-তত্ত্বটি বোঝাতে গিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস তাঁর শ্রীম লিখিত কথামৃতে বলেছেন-
''ব্রহ্ম আর শক্তি অভেদ, এককে মানলেই আর-একটিকে মানতে হয়। যেমন অগ্নি আর তার দাহিকাশক্তি; ... অগ্নি মানলেই দাহিকাশক্তি মানতে হয়, দাহিকাশক্তি ছাড়া অগ্নি ভাবা যায় না; আবার অগ্নিকে বাদ দিয়ে দাহিকাশক্তি ভাবা যায় না। সূর্যকে বাদ দিয়ে সূর্যের রশ্মি ভাবা যায় না।"
"আদ্যাশক্তি লীলাময়ী; সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয় করছেন। তাঁরই নাম কালী। কালীই ব্রহ্ম, ব্রহ্মই কালী! একই বস্তু, যখন তিনি নিষ্ক্রিয় - সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয় কোন কাজ করছেন না -এই কথা যখন ভাবি, তখন তাঁকে ব্রহ্ম বলে কই। যখন তিনি এই সব কার্য করেন, তখন তাঁকে কালী বলি, শক্তি বলি। একই ব্যক্তি নাম-রূপভেদ। ''
সামবেদীয় কেনোপনিষদের উমা হৈমবতী আখ্যানে ব্রহ্ম এবং তৎশক্তি অভেদ, এ শাক্তসিদ্ধান্তটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে গল্পের মাধ্যমে বর্ণনা করা আছে।
আদ্যাশক্তি মহামায়া যখন সৃষ্টি করেন, তখন তিনি সত্ত্বগুণসম্ভূতা ব্রহ্মাণী বা মহাসরস্বতী বলে অভিহিত হন; যখন পালন করেন তখন রজোগুণ সম্ভূতা বৈষ্ণবী বা মহালক্ষ্মী বলা হয় তাঁকে এবং লয় বা ধংসের স্বরূপে মাহেশ্বরী বা মহাকালী বলে অভিহিত হন দেবী । এ কারণেই শ্রীচণ্ডীতে তিনটি চরিত্রে আদ্যাশক্তির এ তিনটি প্রধান রূপেরই স্বরূপ বর্ণনা করা আছে। প্রথম চরিত্রে (প্রথম অধ্যায়) দেবী মহাকালিকা রূপে মধুকৈটভকে বধ করেছেন। দ্বিতীয়( দ্বিতীয়- চতুর্থ অধ্যায়) চরিত্রে দেবী মহালক্ষ্মী রূপে মহিষাসুরকে বধ করেছেন এবং তৃতীয় বা উত্তর চরিত্রে (পঞ্চম-ত্রয়োদশ) দেবী শুম্ভনিশুম্ভকে বধ করেছেন। শ্রীচণ্ডীতে আমরা দেখি যিনি কালী, তিনিই লক্ষ্মী এবং তিনিই সরস্বতী। কিন্তু আমরা প্রচলিত বাঙালি বিশ্বাসে দেখি দেবী দুর্গার দুই মেয়ে লক্ষ্মী এবং সরস্বতী; কিন্তু শ্রীচণ্ডী অনুসারে তাঁরা সকলেই এক আদ্যাশক্তি মহামায়া দুর্গা। শুধুমাত্র প্রকাশ বিভিন্ন।
একই সত্ত্বার শুধুমাত্র প্রকাশ বিভিন্ন হওয়ার কারণে এ দৃশ্যমান বিভিন্ন স্বরূপ দেখে মায়ার প্রভাবে বিভ্রান্ত হয়ে যাই আমরা প্রতিনিয়ত। উপাস্য রুচির বৈচিত্রের জন্যে একই ব্রহ্মের আলাদা আলাদা রূপের প্রকাশ। আমরা এক পরমেশ্বর ছাড়া দ্বিতীয় কারো উপাসনা করি না। বেদে বিভিন্ন মন্ত্রে অত্যন্ত সুন্দর এবং স্পষ্ট করে বিষয়টা বলা আছে-
ইন্দ্রং মিত্রং বরুণমগ্নি-মাহু রথো
দিব্যঃ স সুপর্ণো গরুত্মান্।
একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্তি
অগ্নি যমং মাতরিশ্বানমাহুঃ।।
(ঋগ্বেদ: ১.১৬৪.৪৬)
সেই সদ্বস্তু অর্থাৎ পরব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয়। কিন্তু জ্ঞানীগণ তাঁকেই ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি, দিব্য (সূর্য্য), সুপর্ণ, গরুড়, যম, বায়ু ইত্যাদি বিভিন্ন নামে অভিহিত করে থাকেন।
ন দ্বিতীয়ো ন তৃতীয়শ্চতুর্থো নাপুচ্যতে।
ন পঞ্চমো ন ষষ্ঠঃ সপ্তমো নাপুচ্যতে।
নাষ্টমো ন নবমো দশমো নাপুচ্যতে।
য এতং দেবমেক বৃতং বেদ।।
(অথর্ববেদ:১৩.৪.২)
পরমাত্মা এক, তিনি ছাড়া কেহই দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম বা দশম ঈশ্বর বলে অভিহিত হয় না। যিনি তাঁহাকে শুধু এক বলে জানেন একমাত্র তিনিই তাঁকে প্রাপ্ত হন।
বৈদিক একত্ববাদের মতো শ্রীচণ্ডীতেও অসংখ্য স্থানে দেবীর অদ্বৈতবাদী একত্ব বর্ণিত আছে। উত্তর চরিত্রে দেবী ব্রহ্মাণী, বৈষ্ণবী, মাহেশ্বরী, কৌমারী, ঐন্দ্রী,নারসিংহী, বারাহী এবং চামুণ্ডা এ অষ্টমাতৃকা শক্তিকে সাথে নিয়ে শুম্ভনিশুম্ভের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধে দেবীর হাতে শুম্ভের প্রাণতুল্য ভাই নিশুম্ভ বধ হয়। শুম্ভ ভাইকে নিহত হতে দেখে এবং সকল সৈন্যবলকে বিনষ্ট হতে দেখে , উত্তেজিত হয়ে দেবীকে বলেন, "হে উদ্ধতা দুর্গা, তুমি গর্ব করিও না তুমি অন্যান্য বিভিন্ন দেবীকে সাথে নিয়ে আমাদের সাথে যুক্ত করছো, তাই গর্বিত হবার কিছুই নেই।"
শুম্ভের ক্রোধভরা উক্তি শুনে দেবী তখন বলেন,
শুম্ভের ক্রোধভরা উক্তি শুনে দেবী তখন বলেন,
একৈবাহং জগতত্র দ্বিতীয়া কা মমাপরা।
পশ্যৈতা দুষ্ট ময্যেব বিশন্ত্যো মদ্বিভূতয়ঃ।।
(শ্রীচণ্ডী: ১০.০৫)
"আমিই একমাত্র জগতে বিরাজিতা। আমার অতিরিক্ত অন্য দ্বিতীয়া আর কে আছে জগতে?ওরে দুষ্ট, ব্রহ্মাণী এই সকল দেবী আমারই অভিন্না বিভূতি। এই দেখ ওরা আমাতেই মিলে বিলীনা হয়ে যাচ্ছে।"
অর্থাৎ দেবী এক থেকে বহু হয়েছিলেন,আবার বহু থেকে আবার এক অদ্বৈত হয়ে গেলেন।
"একই শক্তির শুধু বিভিন্নরূপের প্রকাশ চারিদিকে
নিরাকারকে সাকারে বাধার ভক্তচেষ্টা।
সরস্বতী-লক্ষ্মী-কালী এ ত্রিধা মূর্তি পরিব্যাপ্ত,
সত্ত্ব-রজঃ-তমঃ গুণপ্রতিভূ হয়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে।
অণুতে পরমাণুতে সর্বত্রই চলছে সেই
চিন্ময় শক্তির নিয়ত প্রকাশের খেলা।
সৃষ্টির আনন্দ, স্থিতির অভিভাবকত্ব ;
ধ্বংসের মুক্তির প্রশান্তি সর্বত্রই সেই কারণমময়ী।
তিনি অনন্তরূপী,তাঁর কোন প্রাকৃত মূর্তি নেই,
সন্তানের শুদ্ধমানসলোকই তাঁর মূর্ত্তির উৎস। "
সমস্যা বাধে তখনই , যখন আমরা যার যার ব্যক্তিগত বিশ্বাস থেকেই যে যে মতাবলম্বী সবাইকে সেই সেই মতাবলম্বী বানাতে চাই। আমরা ভুলে যাই বেদান্ত দর্শনের চার নং সূত্র-
তত্তু সমন্বয়াৎ।। (১.১.৪) এই সূত্রকে।
এই সূত্রেই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে বিভিন্ন মত-পথ নির্বিশেষে সকল মত-পথই ব্রহ্ম লাভ এবং উপলব্ধির এক একটি পন্থা। অনন্ত তাঁর রূপ, অনন্ত তাঁর বৈভব এবং অনন্ত তাঁর প্রকাশ। তিনিই জীবকে অজ্ঞানতার মায়ার ডোরে বদ্ধ করেন, আবার তিনিই সেই বন্ধন থেকে মুক্তি দেন।
তত্তু সমন্বয়াৎ।। (১.১.৪) এই সূত্রকে।
এই সূত্রেই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে বিভিন্ন মত-পথ নির্বিশেষে সকল মত-পথই ব্রহ্ম লাভ এবং উপলব্ধির এক একটি পন্থা। অনন্ত তাঁর রূপ, অনন্ত তাঁর বৈভব এবং অনন্ত তাঁর প্রকাশ। তিনিই জীবকে অজ্ঞানতার মায়ার ডোরে বদ্ধ করেন, আবার তিনিই সেই বন্ধন থেকে মুক্তি দেন।
ঈশ্বরকে মাতৃরূপে আরাধনা সুপ্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। শুধুমাত্র ভারতবর্ষেই নয় সারা পৃথিবীব্যাপী ছিলো সৃষ্টিকর্তাকে মাতৃরূপে আরাধনার প্রভাব। প্রত্যেকটি জাতির জীবনেই দেখি ঈশ্বরীরূপা মহাদেবীর অবস্থান। যেমন, সেমিটিকদের মধ্যে ছিলো দেবী ননা, অনৎ; আরবদের ছিলো ঈশ্বরীস্বরূপা সর্বশক্তিমান অল্লৎ; ব্যাবিলন ও আসিরিয়াতে ইশতার; পারস্যে ছিলেন মহাদেবী অর্দ্বি; ফিনিশিয়দের হলেন মিলিত্তা; মিশরের অন্যতম প্রধান দেবী হলেন আইসিস; এথেন্সের হলেন এথিনি; গ্রীকদের হলেন আর্তিমিস; রোমানদের হলেন ডায়না। অর্থাৎ পৃথিবীতে প্রাচীন খুব কম জাতিই আছে যাদের জীবনে একজন শক্তি স্বরূপা মহাদেবী নেই।
ভারতবর্ষেও দেবী উপাসনা প্রাচীন বৈদিককাল থেকেই প্রচলিত। বেদের দেবী সূক্ত সহ অসংখ্য সূক্তে, মন্ত্রে দেবীমাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে। শ্রীসূক্ত, ভূসূক্ত, অরণ্য সূক্ত, রাত্রিসূক্ত, দেবীসূক্ত, দুর্গাসূক্ত এ সূক্তগুলি বৈদিক দেবীমাহাত্ম্যের জাজ্বল্যমান উদাহরণ।
কৃষ্ণযজুর্বেদের তৈত্তিরীয় আরণ্যকের দশম প্রপাঠকের দ্বিতীয় অনুবাকে একটি দুর্গাসূক্ত আছে। সূক্তটিতে এ জগত থেকে উদ্ধারের জন্যে জীবের কর্মফলদাত্রী অগ্নিবর্ণা দুর্গাদেবীর শরণ নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
তামগ্নিবর্ণাং তপসা জ্বলন্তীং
বৈরোচনীং কর্মফলেষু জুষ্টাম্।
দুর্গাং দেবীং শরণমহং প্রপদ্যে
সুতরসি তরসে নমঃ।।
আমি সেই বৈরোচনী, জ্যোতির্ময়ী অগ্নিবর্ণা, স্বীয় তাপে শত্রুদহনকারিণী, জীবের কর্মফলদাত্রী দুর্গাদেবীর শরণ নিলাম। হে সংসার-ত্রাণকারিণি দেবী তুমি আমার পরিত্রান করো, তোমায় প্রণাম।
এ দুর্গাসূক্তের শেষে একটি দুর্গাগায়ত্রী মন্ত্রও আছে, মন্ত্রটি দুর্গাপূজার ব্যবহৃত হয়।
কাত্যায়নায় বিদ্মহে, কন্যাকুমারি ধীমহি।
তন্নো দুর্গিঃ প্রচোদয়াৎ।।
কৃষ্ণযজুর্বেদের তৈত্তিরীয় আরণ্যকের দশম প্রপাঠকে দুর্গাস্তোত্র , দুর্গাগায়ত্রীর উল্লেখ থাকার পরেও কিছু মানুষ অজ্ঞানতা দ্বারা আছন্ন হয়ে বলে বেড়ায় বেদে কোন প্রতিমা পূজার কথা নেই, দেবীদুর্গার কথা নেই; যা সত্যি হাস্যকর। অনেকে বিশেষ করে দয়ানন্দ সরস্বতীর অনুসারী আর্যসমাজীরা বিভিন্ন দেবদেবীর নাম, প্রসঙ্গ এবং মাহাত্ম্যকথা থাকায় বেদের ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদকে বেদ বলে মানেন না। এমনকি তারা কৃষ্ণ যজুর্বেদ সংহিতাতে বিভিন্ন দেবপ্রসঙ্গ থাকায়, কৃষ্ণ যজুর্বেদ সংহিতাকেও বাদ দিয়েছেন। যা তাদের একান্তই কষ্টকল্পিত ব্যক্তিগত মত, যার সাথে বেদবেদান্তের বা আমাদের পূর্ববর্তী ঋষিমুনিদের মতের সম্পর্ক নেই।
আমাদের প্রচলিত ধারণামতে বসন্তকালের দুর্গাপূজাকেই প্রকৃত পূজা বলে অবিহিত করা হয় এবং শরৎকালের শারদীয় পূজাকে বলা হয় অকালবোধনে রামচন্দ্র কর্তৃক প্রবর্তিত অকালের পূজা।
কিন্তু এ কথাটা গ্রহণযোগ্য নয়, শ্রীচণ্ডীতে জগন্মাতা দুর্গা নিজেই তাঁর বাৎসরিক পূজা শরতকালে করতে বলেছেন। বাল্মীকিরচিত রামায়ণে কোথাও রামচন্দ্র কর্তৃক দুর্গাপূজার কথা পাওয়া যায় না। অবশ্য বাল্মীকিরচিত রামায়ণের লঙ্কাকাণ্ডে একটা শ্লোকে (৮৩.৩৪) ব্রহ্মার বিধান দ্বারা রঘুনন্দনের মহামায়া পূজার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তবে দুর্গাপূজা বিস্তৃতভাবে পাওয়া যায় কৃত্তিবাস ওঝার (আনু. ১৩৮১-১৪৬১) লেখা কৃত্তিবাসী বাংলা রামায়ণে।
শরৎকালে মহাপূজা ক্রিয়তে যা চ বার্ষিকী।
তস্যাং মমৈতম্মাহাত্ম্যং শ্রুত্বা ভক্তিসমন্বিতঃ।।
(শ্রীশ্রীচণ্ডী :১২.১২)
তস্যাং মমৈতম্মাহাত্ম্যং শ্রুত্বা ভক্তিসমন্বিতঃ।।
(শ্রীশ্রীচণ্ডী :১২.১২)
"শরতকালে আমার যে বাৎসরিক মহাপূজা অনুষ্ঠিত হয় তাতে সবাই ভক্তিসহকারে আমার মাহাত্ম্যকথারূপ শ্রীচণ্ডী পাঠ করে শুনবে।"
দুর্গাপূজার প্রচলন বা মাহাত্ম্য সম্পর্কে মার্কণ্ডেয় পুরাণের ৮১-৯৩ অধ্যায় যা আমাদের কাছে শ্রীচণ্ডী নামে খ্যাত। এ শ্রীচণ্ডীর তেরটি অধ্যায় এবং ৫৭৮ টি মন্ত্রে দেবীমাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পুরাকালে রাজ্যহারা রাজা সুরথ এবং স্ত্রীসন্তানদের দ্বারা প্রতারিত সমাধি নামক এক বৈশ্য একদিন মেধা ঋষির আশ্রমে যান। সেখানে তাঁর নির্দেশে তাঁরা দেবীদুর্গার মৃন্ময়ী প্রতিমায় পূজা করেন এবং দেবীসূক্ত জপ করেন। পূজায় সন্তুষ্টা হয়ে দেবী তাঁদের মনস্কামনা পূর্ণ করেন।
কৃত্তিবাসী রামায়ণ এবং কালিকা পুরাণ থেকে জানা যায় , শ্রীরামচন্দ্র রাবণবধের জন্য অকালে শরৎকালে যুদ্ধজয় করতে দেবীকে পূজা করেছিলেন। তখন থেকে এ পূজার নাম হয় অকালবোধন বা শারদীয়া দুর্গাপূজা। চৈত্রের শুক্লপক্ষেও দেবীর পূজা হয় যা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে খ্যাত। শারদীয়া দুর্গাপূজা আশ্বিনের শুক্লপক্ষে হয়। আবার কার্তিক মাসেও দেবীর পূজা হয়, যা কাত্যায়নী পূজা নামে খ্যাত।
বর্তমানে আমরা বাঙালিরা যে পদ্ধতিতে দুর্গাপূজা করি এ পূজা প্রচলন করেন রাজশাহী জেলার তাহিরপুরের রাজা কংসনারায়ণ, তিনি ছিলেন মনুসংহিতার টীকাকার কুল্লুক ভট্টের বংশধর। কংসনারায়ণকে পূজা পদ্ধতিটি দান করেন রাজপুরোহিত রমেশ শাস্ত্রী। দুর্গাপূজা বঙ্গে প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। বঙ্গের বিভিন্ন স্মৃতিশাস্ত্রকারদের বিধানেও আমরা দুর্গোৎসবের সরব সরব উপস্থিতি পাই। জীমূতবাহনের (আনু. ১০৫০-১১৫০) দুর্গোৎসবনির্ণয়, বিদ্যাপতির (১৩৭৪-১৪৬০) দুর্গাভক্তিতরঙ্গিণী, শূলপাণির (১৩৭৫-১৪৬০) দুর্গোৎসববিবেক, বাচস্পতি মিশ্রের (১৪২৫-১৪৮০) ক্রিয়াচিন্তামণি, শ্রীচৈতন্যদেবের সমসাময়িক রঘুনন্দনের (১৫শ-১৬শ শতক) তিথিতত্ত্ব গ্রন্থেও দুর্গাপূজার বিধান পাওয়া যায়।
তাহিরপুরের রাজা কংসনারায়ণের সাথে সাথে নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় (১৭১০-১৭৮৩) বিভিন্ন আড়ম্বর এবং চাকচিক্যের মাধ্যমে দুর্গাপূজাকে জনপ্রিয় করে তোলেন। একবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে এসে দুর্গাপূজা রাজা, মহারাজা এবং জমিদারদের হাত থেকে বেড়িয়ে সর্বজনীন এক মহোৎসবে পরিনত হয়ে যায়। এ মহোৎসবের পরিধি বাড়তে বাড়তে আজ সারাবিশ্বময় ছড়িয়ে পরছে। আজ দুর্গোৎসব জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সারা পৃথিবীর প্রত্যেকটি
ছোট-বড় শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বর্ণাঢ্য মহোৎসব এটি।
ছোট-বড় শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বর্ণাঢ্য মহোৎসব এটি।
শুক্ল পক্ষের অষ্টমী, নবমী এবং বিজয়াদশমী সারা পৃথিবীতেই দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। কেউ হয়তো ভাদ্র কৃষ্ণা নবমী থেকে পূজা শুরু করে, কেউ প্রতিপদ থেকে, কেউ বা পঞ্চমী থেকে। বাঙালিরা ষষ্ঠি থেকে বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মাধ্যমে পূজা শুরু করে
বিজয়াদশমীতে দশমীবিহিত বিসর্জনাঙ্গ পূজা, সিঁদুর খেলা এবং পরিশেষে নৃত্যগীতাদির সাথে বিসর্জনের মাধ্যমে পাঁচদিনের বর্ণাঢ্য দুর্গোৎসব সমাপ্ত করে।
সবাইকে অগ্রিম শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা!
বিজয়াদশমীতে দশমীবিহিত বিসর্জনাঙ্গ পূজা, সিঁদুর খেলা এবং পরিশেষে নৃত্যগীতাদির সাথে বিসর্জনের মাধ্যমে পাঁচদিনের বর্ণাঢ্য দুর্গোৎসব সমাপ্ত করে।
সবাইকে অগ্রিম শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা!
চিত্তের আধাঁর দূর করে,
মাগো আলোর প্রদীপ জ্বালো।
তোমার আঁচলের ছায়া দিয়ে,
মাগো তৃষিত হৃদয় ভরো।
মুছে দাও, ঘুচিয়ে দাও সকল বিদ্বেষ ;
হিংসা, হানাহানি, পাপ, ক্লেশ।
সন্তানের শুধু এতোটুকুই চাওয়া,
এই শারদপ্রাতে ওগো শারদা ;
তুমিই যেন হও এ জীবনের ধ্রুবতারা।
ওঁ দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা হ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ।
শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ