গুরু পূর্ণিমা ভারতের প্রাচীনকাল থেকে গুরু-শিষ্য পরম্পরার এক দেদীপ্যমান উৎসব। গুরু-শিষ্য সম্পর্ক বিধৃত হয়ে আছে। এই উৎসবের আঙ্গিকে। গুরু-শিষ্যের মহান সম্পর্কের উপর আধারিত এই পূর্ণিমা। গুরু নানা ধরনের হতে পারেন— আধ্যাত্মিক, পঠনপাঠন ইত্যাদি ক্ষেত্রে জ্ঞানদান করে শিষ্যকে আধ্যাত্মিক, মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে, জ্ঞানের আলোকে নিয়ে যাওয়ার পরম্পরা প্রাচীনকাল থেকে ভারতবর্ষে চলে আসছে।
আষাঢ় মাসের পূর্ণিমাকে গুরুপূর্ণিমা বলে অহিহিত করা হয়। এইদিন সমস্ত ধরনের গুরুদের পূজার বিধান আছে আমাদের শাস্ত্রে। গুরুপূর্ণিমা বর্ষা ঋতুর শুরুতেই আসে। ভারতীয় ঐতিহ্য অনুসারে এইদিন থেকে শুরু করে চার মাস পরিব্রাজক সাধুসন্তগণ কোনো বিশেষ স্থানে অবস্থান করে তাদের শিষ্যদের জ্ঞান দান করেন। আবার আমাদের দেশের আবহাওয়ার দিক থেকে দেখলেও দেখা যায় এই চার মাস সর্বশ্রেষ্ঠ; বেশি গরমও থাকে না, আবার বেশি ঠাণ্ডাও থাকে না। সেইজন্য এই সময় পড়াশোনা এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভের উপযুক্ত সময়। গুরুচরণে বসে সাধক, ছাত্র সবাই এই ঋতুতে জ্ঞান, আধ্যাত্মিক শক্তি, ভক্তি আর যোগ জ্ঞান লাভ করার সামর্থ্য লাভ করেন।
আবার এই গুরুপূর্ণিমাকে ব্যাস পূর্ণিমা বলা হয়। এই দিনেই মহাভারত রচয়িতা মহাত্মা কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাসদেবের জন্মদিন। তিনি পরাশর মুনি এবং কৈবর্ত কন্যা সত্যবতীর পুত্র। তিনি বৈদিক স্তোত্রসমূহ সংগ্রহ করে চার ভাগে বিভক্ত করে চার বেদও রচনা করেন। চারটি বেদ হলো ঋক, সাম, যজু ও অথর্ব। তিনি এই বেদজ্ঞান তার চার প্রধান শিষ্য পৈল, বৈশম্পায়ন, জৈমিনি, এবং সুমন্তকে শিক্ষাদান করেন। এই জন্য তিনি বেদব্যাস নামেও পরিচিত। তাঁকে আদিগুরুও বলা হয়। তিনি ব্রহ্মসূত্রও রচনা করেন; তার ব্রহ্মসূত্র লেখাও সমাপ্ত হয় এইদিন। এই দিনে মধ্যভারতের পূজ্য গুরু ঘাসীদাসেরও জন্মদিন। এখন, গুরু বলতে আমরা কী বুঝি? গুরু শব্দটি সংস্কৃত। সংস্কৃত ‘গু’ শব্দের অর্থ ‘অন্ধকার’ বা অজ্ঞানতা আর ‘রু’ কথাটির অর্থ হলো, যিনি অন্ধকার অপসৃত করেন বা সরিয়ে দেন।
অর্থাৎ, গুরু হলেন তিনি যিনি আমাদের অন্ধকার, অজ্ঞানতা দূর করে আলোর পথে নিয়ে যান। আমাদের শাস্ত্রে গুরুর সংজ্ঞা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকায়া, চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ। অর্থাৎ, অন্ধকার, তিমির সরিয়ে যিনি আমাদের জ্ঞানের দিকে নিয়ে যান। তিনিই ‘গুরু’ বলে অভিহিত হন। গুরু এবং দেবতা একই মর্যাদার অধিকারী। যেমন ভক্তি দেবতাদের জন্য প্রয়োজন, সেই একই ভক্তি গুরুর প্রাপ্য। কারণ সদগুরুর কৃপায় ঈশ্বর দর্শনও হতে পারে; গুরুকৃপা ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। বিদ্যা অধ্যয়ন ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতেও গুরুশিষ্য পরম্পরা বিদ্যমান। গুরুপূর্ণিমার দিনে গুরুপূজনের বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। এইদিন শিষ্যগণ নিজেদের তন-মন-ধন সমর্পণ করে গুরু আরাধনায় ব্রতী হন।
আবার যোগশাস্ত্র অনুযায়ী, ভগবান শিব হলেন আদিগুরু। আর এই গুরুপূর্ণিমার দিনই ভগবান শিব আদিগুরু হিসেবে আবির্ভূত হন। কথিত আছে যে, প্রায় ১৫,০০০ বছর পূর্বে । হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে এক যোগী আবির্ভূত হন। তাঁর আদি কেউ জানতেন না। তিনি আবির্ভূত হলে বিপুল জনসমাগম হয়। তার কোনো প্রাণের স্পন্দন দেখা গেল না, কিন্তু তার গণ্ডদেশ বেয়ে মাঝে মাঝে আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। এসব দেখে অন্যরা সেখান থেকে চলে গেলেও সাতজন থেকে যান। সেই যোগী চক্ষু উন্মীলন করলে সেই সাতজন তাকে জিজ্ঞেস করলেন ওই যোগী কী অনুভব করছিলেন সেই সময় কিন্তু তিনি উত্তর না দিয়ে তাঁদের মানসিক প্রস্তুতির জন্য নির্দেশ দিয়ে।
আবার চোখ বুঝলেন। এরপরে দিন, মাস, বছর অতিক্রান্ত হলো, কিন্তু যোগীর দৃষ্টি তাদের উপর পড়লো না। এইভাবে তাদের সাধনার দীর্ঘ ৮৪ বছর অতিক্রান্ত হলে, দক্ষিণায়ন শুরু হলে সেই যোগী আবার তাদের দিকে চোখ মেলে তাকালেন। আর ওই সাতজন দীপ্তিময় আধারে পরিণত হলেন। আর ওই যোগীও আর তাঁদের অবহেলা করেননি। প্রতি পূর্ণিমার দিন ওই যোগী দক্ষিণ দিকে ঘুরে বসতেন ওই সাতজনের গুরু হিসেবে। এই যোগীই হলেন শিব, তিনি এইভাবে জগতের আদিগুরু হলেন। তার এই সাতজন শিষ্য হলেন বিখ্যাত সপ্তর্ষি— অত্রি, পুলহ, পুলস্ত, ক্রতু, অঙ্গিরা, বশিষ্ঠ, মারিচী। যোগ পরম্পরায় গুরুপূর্ণিমাকে পবিত্র হিসেবে গণ্য করা হয়।
ভারতবর্ষে উদ্ভূত সমস্ত ধর্মাবলম্বীই এই উৎসব পালন করেন। হিন্দু-বৌদ্ধ-জৈন সবাই। ভারত ছাড়াও নেপালেও এই উৎসব পালন করা হয়। বৌদ্ধধর্মের অনুগামীগণ এইদিন বুদ্ধ আরাধনায় নিজেদের নিমগ্ন করেন। কথিত আছে, বুদ্ধদেব নিরঞ্জনা নদীর তীরে বোধিবৃক্ষের নিচে ‘বুদ্ধত্ব’ বা জ্ঞান লাভ করার পাঁচ সপ্তাহ পরে বুদ্ধগয়া থেকে সারনাথে চলে যান। সেখানে তিনি তার পাঁচ পুরনো সঙ্গীকে প্রথম তার বাণী প্রদান করেন, কারণ তাঁর মনে হয়েছিল, ওই পাঁচজন তার ধর্মের বাণী সহজে বুঝতে এবং আত্মস্থ করতে পারবেন। ওই শিষ্যগণও বুদ্ধত্বপ্রাপ্ত হলেন।
বুদ্ধদেব তাঁর প্রথম এই পাঁচ শিষ্যকে বাণী দান করেছিলেন এক আষাঢ় পূর্ণিমার দিন। বৌদ্ধগণ অষ্টাঙ্গিক মার্গ পালন করেন। এই দিনে তারা ‘বিপাসনা’ পদ্ধতির মাধ্যমে সাধনা করেন গুরু নির্দেশিত পথে। সারনাথে যেতে গৌতম বুদ্ধকে গঙ্গানদী পেরিয়ে যেতে হয়েছিল। রাজা বিম্বিসার যখন একথা শুনলেন, তিনি সন্ন্যাসীদের জন্য নদী পারাপার করার অর্থ নেওয়া বন্ধ করে দিলেন।
নেপালে এই দিনটি ত্রিনক গুহ পূর্ণিমা হিসেবে পালিত হয়। এই দিনে ত্রিনক গুহদের জীবন ও বাণী স্মরণ করা হয়। বিভিন্ন মন্দিরে ব্যাসপূজন করা হয়। কথিত আছে, ত্রিনক গুহদের মাধ্যমে। ভগবান জ্ঞানদান করেন শিষ্য ও ছাত্রদের ত্রিনক গুহ গীতাও অধ্যয়ন করা হয় এই দিনে বিশেষ করে একটি মন্ত্র পাঠ করা হয় এইদিনে। মন্ত্রটি হলো, ‘ত্রিনক গুহর ব্রহ্মা, ত্রিনক গুহর বিষ্ণু, ত্রিনক গুহর দেবঃ মহেশ্বরঃ, ত্রিনক গুহঃ সাক্ষাৎ পরব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীনিক গুহবে নমঃ। নেপালে এই দিনটি ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবেও পালিত হয়। ছাত্ররা তাদের শিক্ষকদের শ্রদ্ধা জানান এই দিনে। শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে সুসম্পর্ক। স্থাপনের দিন হিসেবেও দিনটিকে গণ্য করা হয়। জৈন ধর্মেও এই দিনটি ত্রিনক গুহ পূর্ণিমা হিসেবে পালন করা হয়।
আমাদের দেশে হিন্দুসমাজে গুরু-শিষ্য পরম্পরা বহু প্রাচীন প্রথা। সদগুরুর আশ্রয়ে থেকে, তাদের। নির্দেশিত পথে থেকে ও কাজ করে অগণিত শিষ্য দেশ ও সমাজে বহু। অসাধ্যসাধন করেছেন। গুরু তাঁদের উপদেশের মাধ্যমে শিষ্যদের উদ্বুদ্ধ করে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসাধ্যসাধনে। অনুপ্রাণিত করেছেন। গুরু-শিষ্য। পরম্পরাতেই আমরা দেখতে পাই শঙ্করাচার্য-গোবিন্দপাদ, শ্রীকৃষ্ণ-সন্দীপনী মুনি, চন্দ্রগুপ্ত-চাণক্য, শিবাজী-রামদাস স্বামী, রামচন্দ্র-বশিষ্ঠ, বিবেকানন্দরামকৃষ্ণ— এই ধরনের অসংখ্য গুরু-শিষ্য জুটিকে। বিভিন্ন সময়ে এই ধরনের জুটি আমাদের দেশে বিশাল। সাম্রাজ্য স্থাপন করেছেন, ধর্ম ও সমাজ সংস্কার আন্দোলন করেছেন।
শঙ্করাচার্য-গোবিন্দপাদ ভারতে ক্রমহ্রাসমান হিন্দুধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন সমগ্র দেশে। ঠিক তেমনই। আধুনিকযুগে মুসলমান ও খ্রিস্টান ধর্মের প্রাবল্য থেকে হিন্দুধর্মের পুনরুজ্জীবন ঘটান বিবেকানন্দ-রামকৃষ্ণ। বিশ্বের দরবারে হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন। আবার মগধে যে মাৎস্যন্যায় চলছিল তা থেকে চাণক্য-চন্দ্রগুপ্ত জুটি মগধ দেশকে আবার সুস্থিতিতে ফিরিয়ে আনেন। চাণক্যের পরামর্শ এবং চন্দ্রগুপ্তের বাহুবল দেশকে সঠিক দিশায় নিয়ে আসে।
শিবাজী ও রামদাস স্বামী জুটি অন্যতম সফল গুরু-শিষ্য জুটি। গুরু রামদাসের প্রতি শিবাজীর ছিল অসীম শ্রদ্ধা। স্বামী রামদাস সমর্থ শিবাজীর জীবনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। শিবাজী মহারাজ ছিলেন। নিষ্ঠাবান হিন্দু এবং গুরুর প্রতি সমর্পিত। তার কাছে হিন্দুধর্মের গুরুত্ব ছিল অসীম। তিনি ছিলেন একজন সত্যিকারের নিষ্ঠাবান ভক্ত, শিষ্য এবং গুরু রামদাসের অনুগত শিষ্য। শিষ্য যেমন নিজের গুরুর সম্পর্কেও উচ্চ ধারণা। পোষণ করতেন। রামদাস স্বামীর সর্বপ্রধান পুস্তক গ্রন্থরাজ ‘দাসবোধ। এই গ্রন্থের একস্থলে শিষ্যকে উপলক্ষ্য করে গুরু বলেছেন,
ধর্ম স্থাপয়িতা নর
ঈশ্বরের অবতার।
হয়েছে হইবে চিরদিন
ঈশ্বরের অবদান।
শিবাজী একজন ক্ষুদ্র সামন্ত সন্তান হয়েও প্রবল পরাক্রান্ত মোগল সম্রাটকে পরাজিত করে এক স্বাধীন হিন্দুরাষ্ট্র স্থাপন করেছিলেন আর এই সমস্ত কাজের পিছনে ছিল তাঁর গুরু স্বামী রামদাসের আশীর্বাদ। গুরু রামদাস তাকে যথার্থই ‘শ্রীমন্ত যোগী’ বা ‘রাজর্ষি আখ্যায় ভূষিত করেছিলেন। শিবাজী মারাঠা সন্ত তুকারামেরও ভক্ত ছিলেন। শিবাজীর মনে ভক্তির সঙ্গে কর্মের যোগ এনে দিয়েছিলেন রামদাস স্বামী। রামদাস রামচন্দ্র ও মারুতির পূজা, রাম-জন্মোৎসব, রাম-কথা কীর্তন ইত্যাদির দ্বারা মহারাষ্ট্রের সাধারণ লোকের মনে আশার সঞ্চার করলেন যে শ্রীরামচন্দ্র এসেছেন, এইবার দেবতারা বন্ধন। মুক্ত হবেন, রাক্ষস মরবে ও সর্বত্র রামরাজ্য স্থাপিত হবে। ধীরে ধীরে লোকের মনে রামচন্দ্র ও শিবাজীর অভিন্নতা সম্পর্কে একটা অস্পষ্ট ধারণা তৈরি হলো। মহারাষ্ট্রের জেধে সরদারদের এক গাথাতে এই ভাব দুই ছাত্র প্রকাশ পেয়েছে,
‘হনুমান অঙ্গদ শ্রীরামজীর।
জেধে বান্দল শিবাজীর।’
শিবাজী ও গুরু রামদাসের সম্মিলনে প্রবল পরাক্রান্ত মোগল শাসনকে পরাস্ত করে দীর্ঘদিন পরে আবার মহারাষ্ট্রে স্থাপিত হয়েছিল এক হিন্দুরাষ্ট্র।
ব্যক্তিজীবনে যেমন গুরুর অসীম ভূমিকা থাকে তেমনই রাষ্ট্র এবং সংগঠনের জীবনেও গুরুর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ভারতবর্ষে সর্ববৃহৎ সামাজিক ও হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন হলো রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্। তারও লাখ লাখ স্বয়ংসেবকদের জন্য, তাদের অনুপ্রেরণার জন্যও একজন গুরুর প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছিল। মানবজীবনের নানান দিক পর্যবেক্ষণ করে অনুভূত হয়েছিল যে কোনো মানুষই ত্রুটিমুক্ত, সর্বগুণ সম্পন্ন নয়। আর কোনো ব্যক্তিবিশেষ, তা তিনি যতই মহান এবং গুণসম্পন্ন হন না কেন, তিনি কোনো রাষ্ট্রের জন্য। আদর্শ হতে পারেন না।
কেউ শ্রীরামের উপাসনা করেন, কেউবা শ্রীকৃষ্ণের অনুগামী। সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠাতা ডাক্তারজী তাই কোনো ব্যক্তিমানুষকে সঙ্রে গুরু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না করে সর্বগুণের আধার, সর্বদা প্রেরণাদাতা, প্রাচীনকাল থেকে আমাদের ধর্ম, সংস্কৃতি, আদর্শ ও ঐতিহ্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ‘গৈরিক ধ্বজ’ বা ‘ভগোয়া ধ্বজ’কে সঙ্রে গুরু হিসেবে বরণ করে নিলেন। এই ধ্বজ আমাদের শুধুই অনুপ্রাণিত করে, উদ্বুদ্ধ করে আদর্শের প্রতি তন্নিষ্ঠ হতে। চিরন্তন আদর্শের প্রতীক হলো এই গৈরিক ধ্বজ। এই ধ্বজ হলো আমাদের জাতীয়তার সর্বোচ্চ, মহত্তম এবং উচ্চতম সত্যের প্রতীক।
এই পবিত্র ‘গৈরিক ধ্বজ’ কী করে সৃষ্টি হলো তা সংক্ষেপে বলছি। যজ্ঞ আমাদের সমাজজীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান গ্রহণ করে আছে। যজ্ঞ শব্দে বিভিন্ন অর্থ বোঝায়। আমাদের জীবনে যা কিছু অশুচি, অনভিপ্রেত, অপবিত্র সেগুলি আমরা যজ্ঞের আগুনে আহুতি দিই। যজ্ঞের দেবতা হলেন অগ্নি। আগুনের শিখা আগুনের প্রতিনিধিত্ব করে আর পবিত্র ‘ভগোয়া ধ্বজ’ হলো যজ্ঞের। স্বর্ণগৈরিক শিখার প্রতীক। আমাদের পুরানো সাহিত্যে সূর্য—সূর্যনারায়ণকে বলা হয়েছে যে তিনি সপ্তাশ্বচালিত রথে বসে আছেন। তিনি আকাশে উপস্থিত হবার আগে তার রথের উপরিস্থিত গৈরিকবর্ণের পতাকা পূর্বদিগন্তে উজ্জ্বল আভায় দেখা যায়; ঘোষণা করে দেয় তমসা দূর করে দিনের আগমন বার্তা। ভগবান সূর্যনারায়ণের এই ধ্বজ স্বয়ং ভগবান। এই শব্দই পরবর্তীকালে । ‘ভগোয়া ধ্বজ’-এ রূপান্তরিত হয়। সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীদের বসনও গৈরিক রঙের; এই রঙ ত্যাগের প্রতীক। গুরুপূর্ণিমার দিনই সঙ্রে স্বয়ংসেবকেরা গুরু ‘গৈরিক ধ্বজের’ পূজন করে। এই গৈরিক ধ্বজ হলো আমাদের ধর্ম এবং জাতীয়তার প্রতীক। এই মহান গুরু, যিনি সাক্ষাৎ পরব্রহ্ম তার প্রতি আপামর ভারতবাসী শ্রদ্ধা জানায়—
‘গুরুঃ ব্রহ্মা গুরুবিষ্ণু গুরুদেব মহেশ্বর।
গুরু সাক্ষাৎ পরব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ॥’
বিনয়ভূষণ দাশ
By- ritambangla.com