উপনিষৎ মানে ব্রহ্মবিদ্যা বিষয়ক গ্রন্থ। উপ + নি পূর্বক সদ্ ধাতু ক্লিপ করিলে
উপনিষৎ শব্দ হয়। উপ = নিকট। নি = নিশ্চয়। সৎ = প্রাপ্তি। ইহাই ব্যাকরণ গত
অর্থ। আমরা ইহার অর্থ করিতেছি :- উপ = নিকট। নি = লইয়া যায়। সৎ = ব্রহ্মতত্ত্ব।
যে বিদ্যা সাধককে ব্রহ্মতত্ত্বের নিকটস্থ করে, উহার নাম উপনিষদ।
শান্তিমন্ত্রম। ওঁ পূর্ণ মদঃ পূর্ণ মিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে।
পূর্ণ পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবা বশিতে।
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ ॥ হরিঃ ওঁ ॥
অদঃ পূর্ণম্ (ইন্দ্রিয়াতীত জগৎ [ব্রহ্মদ্বারা] পূর্ণ)। ইদং পূর্ণম্ (ইন্দ্রিয়গ্রাহ্ জগৎ
[ব্রহ্মদ্বারা] পূর্ণ)। নির্গুণ ব্রহ্ম হইতেই ইন্দ্রিয়াতীত ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগৎ অভিব্যক্ত
হইয়াছে। তাহা হইলেও নির্গুণ এবং নিশ্চল ব্রহ্ম পরিপূর্ণই আছেন।
১। ঈশা বাস্তমিদং সৰ্ব্বং যৎ কিঞ্চজগত্যাং জগৎ।
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্যস্বি ধন।
“পৃথিবীতে যত রকম পদার্থ আছে, সবই ঈশা দ্বারা (ঈশ্বর, ব্রহ্ম বা আত্মা দ্বারা)
ব্যাপ্ত। এইরূপে ব্রহ্ম দর্শন না করিলে তুমি ভােগী হইবে। তুমি কাহারও ধনে অভিলাষ
করিও না।”
২। কুন্নেবেহ কৰ্ম্মাণি জিজীবিষেৎ শত সমাঃ ।
এবং ত্বয়ি নাথে তােহস্তি ন কৰ্ম্ম লিপ্যতে নরে।
“ইহলােকে (সব রকম) কর্ম সকল সম্পন্ন করিবে এবং শত বৎসর বঁচিয়া থাকিবার
ইচ্ছা পােষণ করিবে। ইহার অন্যথা করিবে না। মানবের জন্য লিপ্ততাহীন কর্মই
বিহিত।”
৩। অসুর্যা নাম যে লােকা অন্ধেন তমসাবৃতাঃ ।
তাভস্তে প্রেত্যাভিগচ্ছন্তি যে কে চাত্মহনাে জনাঃ ॥
যাহারা আত্ম হন ও জ্ঞানহীন তমসাচ্ছন্ন মানুষ, তাহারা মৃত্যুর পর অসুরলােকে গমন
করে।
৪। অনেজদেকং মনসাে জবীয়াে নৈনদেবা আপ্লব পূর্বমর্ষ।
তদ্ধাবতােইন্যানতত্যতি তিষ্ঠৎ তস্মিন্নপাে মারিশ্যা দধাতি।
তিনি এক, তিনি স্পন্দন রহিত, মন হইতেও বেগবান, (পূর্বযুগের) দেবতাগণ তাহাকে
প্রাপ্ত হন নাই। তিনি স্থির হইলেও সকলকে অতিক্রম করিয়া অধিক দ্রুত বেগশীল।
তাঁহাকে আশ্রয় করিয়ই মাতরিশ্বা (সগুণব্রহ্ম) স্নেহরস (আশীর্বাদ) দান করিয়া থাকেন।
৫। যথাদর্শে তথাত্মনি, যথা স্বপ্নে তথা পিতৃলােকে।
যথাঙ্গু পরীব দদৃশে, তথা গন্ধর্বলােকে,
চ্ছায়া পয়ােরি ব্রহ্মলােকে। ১০৬ ॥
দর্পণে যেমন নিজের রূপ প্রতিফলিত হয় ঠিক সেইরূপ আত্মস্বরূপে মহাশক্তি বা
ব্রহ্মতত্ত্ব প্রতিফলিত হইয়া থাকে। স্বপ্নে যেমন জ্ঞানের ধারা প্রতিফলিত হয় পিতৃলােকে
এই ব্রহ্মজ্ঞান বা আত্মজ্ঞানের এতটুকু প্রতিফলন হইয়া থাকে। জলের মধ্যে নিজের ছায়া
যতটা প্রতিফলিত হয়, সঙ্গীত বিদ্যার মধ্য দিয়া (গন্ধর্বলােক) ততটা ব্রহ্মজ্ঞানের
প্রতিফলন হইতে পারে। আর ব্রহ্মলােকে আতপ ও ছায়ার মত আত্মজ্ঞান প্রতিফলন
হইয়া থাকে।
৬। যস্তু বিজ্ঞানবান্ ভবতি যুক্তেন মনসা সদা।
তস্মেন্দ্রিয়াণি বস্যানি সদা ইব সারখেঃ ॥ ৬০।
যিনি বিজ্ঞানবান হন, মনও ঘঁহার বিবেকসংযুক্ত থাকে, তাহার ইন্দ্রিয়গণ সারথির
সৎ অশ্বের মতন বশীভূত থাকে।
৬। যজ্ঞ সৰ্ব্বাণি ভূতানি আত্মনেৰানুপতি।
সর্বভূতেষু চাত্মানং ততাে ন বিজুগুস্পতে।
যিনি সর্বদা সর্বভূতকে আত্মতে এবং আত্মাকে সর্বভূতে দর্শন করেন, তিনি সেইরূপ
আত্মদর্শনের ফলে ঘৃণা করেন না।
৭। যন্ত্র বিজ্ঞানবান্ ভবত্য মনস্কঃ সদা শুচিঃ।
ন স তৎপদমাপ্নোতি সসারং চাধিগচ্ছতি। ৬১।
যে অবিজ্ঞানবাদী, যে অমনস্ক, যে সদা অশুচি, সে সেই ব্রহ্মপদপ্রাপ্ত হয় না, সে
সংসারগতি (অর্থাৎ হীনগতি) প্রাপ্ত হয়।
৭। যস্মিন সৰ্ব্বাণি ভূতানি আত্মৈবাভূদ বিজানতঃ।
তত্র কো মােহঃ কঃ শােক একত্ব মনুপশতঃ |
যে সময়, সর্বভূতই আত্মারই রূপ, সাধকের এইরূপ অনুভব হয়, তাঁহার মােহ এবং
শােক থাকে না। ইহার কারণ, তিনি সর্বত্র একই চেতনা অনুভব করেন।
শক্তিবাদ ভাষ্য। এই মন্ত্রে ব্রহ্মজ্ঞানী মহাপুরুষের লক্ষণ কিরূপ, উহা জানা যায়। পূর্ব
মন্ত্রে চেতনালক্ষণ বলা হইয়াছিল।
৮। যস্থ বিজ্ঞানবান্ ভবতি সমনস্কঃ সদা শুচিঃ।
সতু তৎ পদমাগ্লোতি যস্মভুয়াে ন জায়তে। ৬২।
যিনি (রখী) বিজ্ঞানবান, যিনি সমনস্ক এবং সদা শুদ্ধ, তিনি সেই পরমপদ প্রাপ্ত হন,
যাহা প্রাপ্ত হইলে আর জন্ম হয় না।
৮। স পর্যগাঙ্গুক্রমকায়মব্রণ মম্নবির শুদ্ধমপাপবিদ্ধ।
কবির্মনীয়ী পরিভূঃ স্বয়ঃর্যাথাতথ্যতােইৰ্থাৎ ব্যদধাৎ শাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ |
তিনি দেশকালের বাধা অতিক্রম করিয়া সর্বব্যাপী, তিনি শুদ্ধ প্রকাশময়, তিনি
কায়াহীন, তাহাতে ক্ষত নাই (অক্ষতঃ), তিনি অস্নাবিরং (শিরা রহিত, অর্থাৎ শরীর ধর্ম
বর্জিত ব্যাপক তত্ত্ব), তিনি শুদ্ধ (নির্মল), তিনি অপাপবিদ্ধ (তাহাতে পাপ স্পর্শ করে
অর্থাৎ পাপকর্ম তাহাতে নাই)। তিনি কবি (সর্বদ্রষ্টা), তিনি মনীষী (সর্বজ্ঞ)। তিনি
পরিভূঃ (সর্বোপরি বিরাজমান, অর্থাৎ তিনি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কেহই নাই)। তিনি স্বয়ম্ভু
(নিজে নিজেই আছেন)। তিনি (পরমাত্মা) শাশ্বতীভ্যঃ (শাশ্বতী শক্তিগণকে)
(সমাভ্যঃ) কালগতিতে সৃষ্টি ও লয় চক্রকে নিজ নিজ কর্তব্য সমূহকে যথাযথ করিবার
শক্তিদান করিয়াছেন।
৯। বিজ্ঞান সারথি যস্ত মনঃ প্রগ্রহবা নরঃ।
সােহধ্বনঃ পারমাপ্পেতি তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদ৷ ৬৩।
বিজ্ঞান যাহার (যে রথীর) সারথি, মন যাহার ইন্দ্রিয়রূপ অশ্বগণের সংযমিত করিবার
রঞ্জুরূপী, তিনি সংসারে থাকিয়াও শ্রেষ্ঠ বিষ্ণুপদ (ব্যাপক ব্রহ্মপদ) প্রাপ্ত হন।
৯। অগ্নির্যথৈকো ভুবনং প্রবিষ্টো
রূপং রূপং প্রতিরূপাে বভূব।
একস্তথা সৰ্ব্বভূতান্তরাত্মা
রূপং রূপং প্রতিরূপাে বহিশ্চ৷
একই অগ্নি, যেরূপ জগতে প্রবেশপূর্বক বিভিন্ন বস্তুতে তদ্রুপ হইয়া অবস্থান করিতেছে
এবং অগ্নি যেমন সেই বস্তু হইতে পৃথক হইয়াও অবস্থান করিতেছে ঠিক সেইরূপ আত্মা
এক এবং নানা জীবে প্রবিষ্ট থাকিয়া ও সর্বজীব হইতে স্বতন্ত্র হইয়াও অবস্থান
করিতেছেন।
১০। ইন্দ্রিয়েভ্যঃ পরা হ্যর্থ অর্থেভ্যশ্চ পরং মনঃ।
মনসস্তু পরা বুদ্ধিবুদ্ধেরাত্মা মহান্ পরঃ ॥ ৬৪।
ইন্দ্রিয়গণ অপেক্ষা অর্থ সকল শ্রেষ্ঠ। অর্থ সকল হইতে মন শ্রেষ্ঠ। মন হইতে বুদ্ধি
শ্রেষ্ঠ, বুদ্ধি অপেক্ষা মহানআত্মা শ্রেষ্ঠ।
9
১১। মহতঃ পরমব্যক্তমব্যক্তাৎ পুরুষঃ পরঃ।
পুরুষান্ন পরং কিঞ্চিৎ, সা কাষ্ঠা সা পরা গতিঃ ॥ ৬৫।
মহত্তত্ত্ব হইতে অব্যক্ত তত্ত্ব শ্রেষ্ঠ, অব্যক্ত তত্ত্ব হইতে পুরুষ তত্ত্ব শ্রেষ্ঠ। পুরুষ তত্ত্ব
হইতে শ্রেষ্ঠ তত্ত্ব আর কিছুই নাই। ইহাই শেষ স্তর এবং ইহাই শ্রেষ্ঠ গতি।
১২। এষ সৰ্ব্বেষু ভূতেষু গূঢ়োত্মা ন প্রকাশতে।
দৃশ্যতে ত্বয়া বুদ্ধ্যা সূক্ষ্ময়া সূক্ষ্মদর্শিভিঃ ॥ ৬৬।
এই আত্মা সমস্ত ভূতের অভ্যন্তরে গুহভাবে অবস্থিত আছেন। কিন্তু সকলের নিকট
ইনি প্রকাশ পান না। সূক্ষ্মদর্শী মহাত্মাগণ একাগ্র বুদ্ধি এবং সূক্ষ্ম দার্শনিকতা দ্বারা ইহাকে
দর্শন করেন।
১২। একোবশী সৰ্ব্বভূতান্তরাত্মা
একং রূপং বহুধা যঃ করােতি।
তমাত্মস্থং যেইনুপশ্যন্তি ধীরা
স্তেষাং সুখং শাশ্বতং নেতরেষা৷ ৯৮
বশী (সর্বনিয়ন্তা) এক, তিনিই সমস্ত জীবে অন্তরাত্মা হইয়া অবস্থান করিতেছেন।
তিনি একই আত্মরূপকে বহু রূপ করিয়াছেন, সেই সর্বনিয়ন্তাকে (বশীকে) যিনি ধীর
হইয়া নিজের মধ্যে অনুভব করেন, তিনিই শাশ্বত সুখ প্রাপ্ত হন, অন্যে নহে।
১৩। নিত্যোহনিত্যানাং চেতনশ্চেতনানা
একো বহুনাং যাে বিদধাতি কামান্।
তমাত্মস্থং যেহনুপশ্যতি ধীরা
স্তেষাং শান্তিঃ শাশ্বতী নেতরেষা৷ ৯৯।
সমস্ত অনিত্য পদার্থের মধ্যে যিনি অবিনাশী, যিনি সমস্ত চেতনার মধ্যে চেতনা
সঞ্চার করেন, এক হইয়াও যিনি বহুর কামনা পূর্ণ করেন; নিজের (মস্তিষ্ক মধ্যস্থিত শিব
পিণ্ড) মধ্যে আত্মস্থ হইয়া যিনি তাহাকে প্রত্যক্ষ করেন তাহারই শাশ্বত শান্তি লাভ হয়,
অন্যের নহে।
১৩। অঙ্গুষ্ঠ মাত্রঃ পুরুষাে জ্যোতিরেবাধূমকঃ ।
ঈশানাে ভূতভব্যস্য স এবাদ্য স উ শ্বঃ |
এতদ্বৈতৎ|| ৮৪||
অঙ্গুষ্ঠমাত্র পুরুষই জ্যোতির্ময় আত্মা, তাহাতে কোনই ধূম্র নাই অর্থাৎ অজ্ঞানতা নাই।
তিনি অতীত এবং ভবিষ্যতের ঈশ্বর। তিনিই আজ এবং তিনিই কাল। ইহাই নচিকেতা
জিজ্ঞাসিত আত্মতত্ত্ব।
১৩। যচ্ছেদ্বানসী প্রাজ্ঞস্ত যচ্ছে জ্ঞান আত্মনি।
জ্ঞানমাত্মনি মহতি তদ যচ্ছেচ্ছান্ত আত্মনি। ৬৭ ।
আকে
প্রাজ্ঞ ব্যক্তি (বিবেকশালী মনুষ্য) বা ইন্দ্রিয়কে মনে সংযম করিবেন। (বা যে মনে
সংযমিত হইয়াছে) সেই সংযমিত মনকে আনাত্মাতে সংযম করিবেন।
মহৎতত্ত্বে সংযমিত করিবেন এবং মহত্তত্ত্বে সংযমিত আত্মাকে প্রশান্ত আত্মাতে
সংযমিত করিবেন।
১৪। উত্তিষ্ঠিত জাগ্রত প্রাপ্য বরান্ নিবােধত।
ক্ষুরস্য ধারা নিশিতা দুরত্যয়া দুর্গংপথস্তৎ কবয়াে বদন্তি। ৬৮ ॥
১৪। সতিঞ্চ বিনাশঞ্চ যস্তদ্বেদোভয় সহ।
বিনাশেন মৃত্যুং তীক্বা সত্যা স মৃতমম্মুতে।
যে জানে “সতি” এবং “বিনাশের একত্র অনুষ্ঠান চলে, সে লােক বিনাশের
অনুশীলন করিয়া মৃত্যুকে অতিক্রম করে এবং “সতির আশ্রয়ে অমৃতত্ব প্রাপ্ত হন।
উখিত হও। জাগ্রত হও। শ্রেষ্ঠ গুরুর নিকট বার বার জ্ঞান লাভে উৎসাহিত হও।
আত্মজ্ঞান বিকাশের এই পথকে আত্মজ্ঞান সম্পন্ন মহাত্মাগণ শাণিত ক্ষুরের উপর দিয়া
বিচরণের মত দুর্গম বলিয়াছেন।
১৫। অশব্দম স্পর্শম রূপম ব্যয়য়ং
তথা রসং নিত্যমগন্ধবচ্চ যৎ।
অনাদ্যনমন্তং মহতঃ পরং ধ্রুবং
নিচায্য তং মৃত্যু মুথাৎ প্রমুচ্যতে। ৬৯।
9
তিনি অশব্দ, তিনি অস্পর্শ, তিনি অরূপ, তিনি অরস, তিনি অগন্ধ, তিনি নিত্য, তিনি
আদি অন্তহীন, তিনি মহৎ তত্ত্ব হইতেও শ্রেষ্ঠ, তিনি ধ্রুব, তাহাকে (তপস্যা, সাধনা ও
শাস্ত্রজ্ঞান দ্বারা) নিশ্চয়রূপে নির্ণয় করিয়া সাধক জন্ম মৃত্যু হইতে বিমুক্ত হন।
প্রতিবােধবিদিতং মতমমৃতত্ত্বং হি বিন্দতে।
আত্মনা বিন্দতে বীৰ্যং বিদ্যয়া বিন্দতেমৃত। ৪
প্রতিটি বােধ আত্মাই করেন, এইভাবে জানাই মুক্তির সাধনা। এইরূপ জানাই (লৌকিক
ঐশ্বর্য বিষয়ে) বীর্যকে জানা এবং এইরূপ জানাই অমৃতকে জানা।
যদি মনসে সুবেদেতি দমেবাপি।
নূনং ত্বং বেথ ব্রহ্মণাে রূপ।
যদস্য ত্বং যদস্য দেবেষথ নু
মীমাংসমেব তে মনে বিদিত। ১
যদি মনে কর, ব্রহ্মের রূপ তুমি জানিয়াছ, তবে জানিবে উহা অল্পজ্ঞান। কারণ,
ব্রহ্মের ভৌতিকরূপ (বিশ্বরূপ) এবং দৈবরূপ উভয়ই অল্প। কাজেই তােমার জ্ঞাত
ব্রহ্মরূপটি (যুক্তিতর্ক দ্বারা) মীমাংসা করা কর্তব্য।
২৪। নাবিরতাে দুশ্চরিতান্নাশান্তো না সমাহিতঃ।
নাশান্ত মানসাে বাপি প্রজ্ঞানে নৈব মাঞ্চুয়াৎ। ৫৩।
যে মনুষ্য দুশ্চরিত্র হইতে বিরত নহে, সংযতেন্দ্রিয় নহে, সমাহিত চিত্ত নহে এবং
ভােগস্পৃহা রহিত নহে; সে মনুষ্য আত্মজ্ঞান লাভ করিতে সক্ষম নহে; পরন্তু যে মনুষ্য
দুশ্চরিত্র হইতে বিরত, সংযতেন্দ্রিয়, সমাহিত চিত্ত এবং ভােগস্পৃহা রহিত সে মনুষ্য
প্রজ্ঞানের (অর্থাৎ জ্ঞানের ক্রমবিকাশের পথে আত্মজ্ঞান প্রাপ্ত হয়।
9
নাহং মনে সুবেদেতি নাে ন বেদেতি বেদ চ।
যাে নস্তদুবেদ বেদ নাে ন বেদেতি বেদ চ। ২
আমি উত্তমরূপে ব্রহ্মকে জানি এইরূপ আমি মনে করি না। এবং আমি তাহাকে
একেবারেই জানি না, ইহাও মনে করি না। আমাদের মধ্যে যিনি “জানি” এবং “জানি
” কথার ভাব বুঝিতে পারেন, তিনি ব্রহ্মকে জানিতে পারেন।
নায়মা প্রচলন লভ্যা
ন মেনা ন বহুনা তন
যমেনৈষ বৃণুতে তেন লভ্য-
স্তস্যৈব আত্মা বিবৃহূতে তনু স্বাম। ৫২।
কেবল প্রবচন (শাস্ত্রাধ্যায়ন ও শাস্ত্রব্যাখ্যা) দ্বারা এই আত্মাকে লাভ করা যায় না।
কেবল মেধাদ্বারা বা বহু শাস্ত্রশ্রবণেও আত্মাকে লাভ করা যায় না। পরন্তু, যিনি
আত্মাকে (জীবন লক্ষ্যে) বরণ করিয়া লন, তিনি (তপস্যার প্রভাবে) তাহাকে জানিতে
সক্ষম হন। এইরূপ ব্যক্তির নিকটই আত্মতত্ত্ব উপদেশ দান করা যায়।
অঙ্গুষ্ঠ মাত্রঃ পুরুষাে মধ্য আত্মনি তিষ্ঠতি।
ঈশানাে ভূতভব্যস্য ন ততাে বিজুগুপ্সতে।
এতদ্বৈতৎ॥ ৮৩।
শরীরের মধ্যে অঙ্গুষ্ঠ পরিমিত স্থানে পুরুষ (আত্মা) বিদ্যমান আছেন। তিনি
অতীতের ঈশ্বর, তিনি ভবিষ্যতেরও ঈশ্বর। তঁহাকে জানিতে পারিলে আর কিছুই
অজ্ঞাত থাকে না। ইহাই নচিকেতার জিজ্ঞাসিত আত্মতত্ত্ব।
লিখনে- প্রোজ্জ্বল মণ্ডল