শ্রীরামই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান এবং ভালবাসা; তাঁর এ নিঃস্বার্থ ভালবাসা তাকে অমর করে দিয়েছে। তাই আজও যেখানেই শ্রীরামচন্দ্রের কথা, সেখানেই উচ্চারিত হয় ভক্ত শ্রীহনুমানের নাম।শ্রীরামচন্দ্রের পরম ভক্ত বজরঙ্গবলী শ্রীহনুমান।
ত্রেতাযুগের এক চৈত্রী পূর্ণিমা তিথিতে মহাবীর শ্রীহনুমানজীর জন্ম হয়। শ্রীহনুমানকে উদ্দেশ্য করে উত্তরভারতের শ্রীতুলসীদাস গোস্বামীর চল্লিশটি শ্লোকের একটি 'চালীসা' গ্রন্থ রচনা করেন। রামভক্তদের বিশ্বাস, মনুষ্যের সকল কামনা পূরণ হয় 'শ্রীহনুমান চালীসা' পাঠে।
উত্তর, মধ্য এবং পশ্চিম ভারতের হিন্দিভাষীদের কাছে গ্রন্থটি নিত্যপাঠ্য।হনুমানজীর জন্মবার মঙ্গলবারে হনুমান চালীসা সবাই পাঠ করে। তবে বাঙালিদের মধ্যে এই গ্রন্থের প্রচার কম হলেও, ইদানীং পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরার বাঙালিদের মধ্যে ব্যাপকভাবে হনুমান চালীসা পাঠের মাধ্যমে গ্রন্থটির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এর সাথে বাড়ছে বাঙালিদের মধ্যে রামনামের জনপ্রিয়তা।
শ্রীহনুমতে নমঃ
শ্রীহনুমান চালীসা
দোঁহা
শ্রী গুরু চরন সরোজ রজ, নিজ মনু মুকুর সুধারী ।
বরনউ রঘুবর বিমল জসু, জো দায়ক ফল চারি ।।
বুদ্ধিহীন তনু জানিকে, সুমিরৌ পবন -কুমার ।
বল বুদ্ধি বিদ্যা দেহু মোহি , হরহু কলেস বিকার ।।
চৌপাই
জয় হনুমান জ্ঞান গুন সাগর।
জয় কপীস তিহুঁ লোক উজাগর ।।১
অনন্ত জ্ঞান,গুণের সাগর এবং বানরকুলের শিরোমণি এবং স্বর্গ,মর্ত্য এবং পাতাল এই ত্রিলোক যাঁর কর্মের আলোয় আলোকিত ; সেই হনুমানের জয় হোক।
রাম দূত অতুলিত বল ধামা।
অঞ্জনী-পুত্র পবনসুত নামা ।।২
শ্রীরামচন্দ্রের দূত হয়ে যিনি দেবী কাছে গিয়েছিলেন। দেহে অতুলনীয় বল ধারণ করে অঞ্জনীপুত্র এবং পবনপুত্র নামে যিনি পিতামাতার নামকে গৌরবান্বিত করেছেন।
মহাবীর বিক্রম বজরঙ্গী।
কুমতি নিবার সুমতি কে সঙ্গী ।।৩
মহাবীর বিক্রমে বজরঙ্গী নামে খ্যাত হয়ে যিনি সকল কুমতি সম্পন্ন মানুষদের বিনাশ করে, সুমতি সম্পন্ন মানুষদের সঙ্গী হয়ে তাদের সাহায্য সহযোগিতা করেন।
কঞ্চন বরন বিরাজ সুবেসা।
কানন কুণ্ডল কুঞ্চিত কেশা ।।৪
সোনার মত গায়ের বর্ণে যিনি দেহে বিবিধ পোশাক এবং আভূষণ ধারণ করে উজ্জ্বল হয়ে আছেন।কানে তাঁর সোনার কুণ্ডল এবং সারা মাথায় কুঞ্চিত চুলে অপূর্ব সৌন্দর্য ধারণ করে আছেন।
হাত বজ্র ঔ ধ্বজা বিরাজৈ।
কাঁধে মূঁজ জনেঊ সাজৈ ।।৫
একহাতে ভয়ংকর কঠোর বজ্র এবং অন্যহাতে গৈরিক পতাকা ধারণ করে আছেন। কাঁধে মুঞ্জাতৃণ নির্মিত পৈতা শোভা পাচ্ছে।
শঙ্কর সুবন কেশরীনন্দন।
তেজ প্রতাপ মহা জগ বন্দন ।।৬
শঙ্করের আশীর্বাদে কেশরীর পুত্ররূপে জন্ম নিয়ে মহাতেজ এবং মহাপ্রতাপ ধারণ করে তিনি আজ সমগ্র জগতে বন্দনীয়।
বিদ্যাবান গুনী অতি চাতুর।
রাম কাজ করিবে কো আতুর ।।৭
সকল বিদ্যায় পারদর্শী, সকল গুণে বিভূষিত, অত্যন্ত চতুর হয়ে যিনি তাঁর কার্যাকার্য সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে অবিহিত। যিনি শ্রীরামচন্দ্রের আদেশ পাগলের মত পালন করেন।
প্রভু চরিত্র সুনিবে কো রসিয়া।
রাম লক্ষ্মণ সীতা মন বসিয়া ।।৮
শ্রীরামচন্দ্রের দৈবীচরিত্র আস্বাদনে যিনি সদা মগ্ন।যাঁর হৃদয়ে শুধুই শ্রীরাম, সীতা এবং লক্ষ্মণ বিরাজমান।
সূক্ষ্ম রূপ ধরি সিয়হিঁ দিখাবা।
বিকট রূপ ধরি লঙ্কা জরাবা ।।৯
যিনি একাধারে সুক্ষ্ম , বিশাল সকল রূপ ধারণ করতে পারেন। সুক্ষ্ম রূপ ধারণ করে তিনি লঙ্কায় প্রবেশ করলেন এবং বিশাল রূপ করে লঙ্কারে দগ্ধ করলেন।
ভীম রূপ ধরি অসুর সংহারে।
রামচন্দ্র কে কাজ সঁবারে ।।১০
অসুর বিনাশ করতে প্রয়োজনে যিনি ভয়ংকর রূপ ধারণ করে শ্রীরামচন্দ্রের জগত কল্যাণের সকল কাজ সুসম্পন্ন করেন।
লায় সঞ্জীবন লখন জিয়ায়ে।
শ্রীরঘুবীর হরষি উর লায়ে ।। ১১
সঞ্জীবনী ঔষধ নিয়ে এসে যিনি লক্ষণের প্রাণ রক্ষা করেছেন এবং ভাই লক্ষ্মণ প্রাণে বেঁচে যাওয়ায়, শ্রীরামচন্দ্রকেও চিন্তামুক্ত করে আনন্দিত করেছেন।
রঘুপতি কীনহী বহুত বড়াঈ।
তুম মম প্রিয় ভরতহি সম ভাই ।। ১২
রঘুপতি শ্রীরামচন্দ্র বড় আদর করে প্রশংসা করে যাঁকে ভরতের সমতুল্য প্রিয় ভাইয়ের মর্যাদা দিয়েছেন।
সহস বদন তুম্ হারো জস গাবৈঁ।
অসঁ কহি শ্রীপতি কন্ঠ লাগাবৈঁ ।।১৩
"জগতের দিকেদিকে মানুষের মুখে মুখে তোমার যশ খ্যাতি ছড়িয়ে পরবে" -এই আশীর্বাদ করে শ্রীপতি রামচন্দ্র হনুমানকে আলিঙ্গন করলেন।
সনকাদিক ব্রহ্মাদি মুনীসা
নারদ সারদ সহিত অহীসা ।।১৪
জম কুবের দিগপাল জহাঁ তে।
কবি কোবিদ কহি সকে কহাঁ তে ।।১৫
ব্রহ্মাদি দেবগণ, সরস্বতী সনকাদী মুনি চতুষ্টয় অনন্তনাগ, নারদ, যমরাজ কুবের আদি দিশার রক্ষক দিকপালগণ সহ জগতের পণ্ডিতগণ জানতে পারেন না তিনি কোথায়।
তুম উপকার সুগ্রীবহিঁ কীনহা।
রাম মিলায় রাজপদ দীনহা ।।১৬
রাজ্যহারা সুগ্রীবের সাথে শ্রীরামচন্দ্রের বন্ধুত্ব করিয়ে, তাঁকে রাজপদে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে সুগ্রীবের পরম উপকার করেছিলে।
তুমহারো মন্ত্র বিভীষণ মানা।
লঙ্কেশ্বর ভয় সব জগ জানা ।।১৭
লঙ্কেশ্বর রাবণের ভয়ে যখন সবাই কম্পমান ছিলো, তখন তোমার সুপরামর্শ মেনে বিভীষণ আপনার পরামর্শ মেনে ছিলেন এবং তার পরিনামে তিনি লাঙ্কার অধীশ্বর হয়েছিলেন একথা জগতের সকলেই জানে।
জগু সহস্র যোজন পর ভানু।
লীল্যো তাহি মধুর ফল জানু।।১৮
শিশুকালে এক যুগ সহস্র যোজন দূরে অবস্থিত সুর্যদেবকে দেখে, রক্তিম সুমধুর ফল মনে করে সেই ফল ধরতে উদ্যত হয়েছিলে।
প্রভু মুদ্রিকা মেলি মুখ মাহী।
জলধি লাঘিঁ গয়ে অচরজ নাহী ।।১৯
শ্রীরামচন্দ্রের পবিত্র নাম মুখে নিয়ে সাগর লঙঘন করে লঙ্কায় প্রবেশ করে সীতাকে আংটি দিয়েছিলে। আশ্চর্যের কিছু নেই, এ শুধু তোমার দ্বারাই সম্ভব।
দুর্গম কাজ জগত কে জেতে।
সুগম অনুগ্রহ তুমহরে তেতে ।।২০
জগতে যত দুষ্কর, কঠিন কাজ রয়েছে, শ্রীরামচন্দ্রের কৃপায় তা সবই তোমার কাছে সহজসাধ্য।
রাম দুয়ারে তুম রখবারে।
হোত ন আজ্ঞা বিনু পৈসারে ।। ২১
সব সুখ লহৈ তুমহারি সরনা।
তুম রক্ষক কাহূ কো ডড় না ।। ২২
আপনা তেজ সমহারো আপৈ।
তীনৌঁ লোক হাঁক তেঁ কাঁপৈ ।। ২৩
ভূত পিশাচ নিকট নহিঁ আবৈ।
মহাবীর জব নাম সুনাবৈ ।। ২৪
নাসৈ রোগ হরৈ সব পীড়া।
জগত নিরন্তর হনুমত বীরা ।।২৫
সঙ্কট তেঁ হনুমান ছুড়াবৈ।
মন ক্রম বচন ধ্যান জো লাবৈ ।।২৬
সব পর রাম তপস্বী রাজা।
তিন কে কাজ সকল তুম সাজা ।।২৭
ঔর মনোরথ জো কোই লাবৈ।
সোই অমিত জীবন ফল পাবৈ ।।২৮
চারোঁ য়ুগ প্রতাপ তুমহারা।
হৈ প্রসিদ্ধ জগত উজিয়ারা ।। ২৯
সাধু সন্ত কে তুম রখবারে।
অসুর নিকন্দন রাম দুলারে ।।৩০
অষ্ট সিদ্ধি নৌ নিধি কে দাতা।
অস বর দীন জানকী মাতা ।।৩১
রাম রসায়ন তুমহারে পাসা।
সদা রহো রঘুপতি কে দাসা ।।৩২
তুমহরে ভজন রাম কো পাবৈ।
জনম জনম কে দুখ বিসরাবৈ ।।৩৩
অন্তকাল রঘুবর পুর জাঈ।
জঁহা জন্ম হরি-ভক্ত কহাঈ ।।৩৪
ঔর দেবতা চিত্ত ন ধরঈ।
হনুমত সেই সর্ব সুখ করঈ ।।৩৫
সঙ্কট কটে মীটে সব পীড়া।
জো সুমিরৈ হনুমত বলবীরা ।।৩৬
জয় জয় জয় হনুমান গোসাঈঁ।
কৃপা করহু গুরু দেব কী নাঈ ।। ৩৭
জো শতবার পাঠ কর কোঈ।
ছুটহি বন্দি মহা সুখ হোঈ ।। ৩৮
জো ইয়ে পড়ে হনুমান চালীসা।
হোয় সিদ্ধি সাখী গৌরীসা ।। ৩৯
তুলসীদাস সদা হরি চেরা
কীজৈ নাথ হৃদয় মেঁ ডেড়া ।। ৪০
দোঁহা
পবনতনয় সংকট হরণ, মঙ্গলমুরতি রূপ ।
রাম লখন সীতা সহিত, হৃদয় বসহু সুর ভূপ ।।
ইতি হনুমান চালীসা