সেঙ্গোল, সেঙ্গল বা সেংগোল ( Sengol ) হল একটি ঐতিহাসিক সোনার রাজদণ্ড বা ধর্মদণ্ড। হাজার বছর ধরে তামিল ইতিহাসের চোল রাজারা এই সেঙ্গোল এর মাধ্যমে পরাজিত রাজা, বিজয়ী রাজাকে অথবা পুরাতন রাজা নতুন রাজাকে ক্ষমতা হস্তান্থর করার প্রথা পালন করত।
তেমনি ভাবে ব্রিটিশরাজ থেকে মুক্তি এবং স্বাধীন ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসাবে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।
সেঙ্গোল হল একটি ধর্মদণ্ড, যা "ঐশ্বরিক ও নৈতিক শাসন"-এর প্রতীক, এবং প্রাচীন তামিল গ্রন্থে উচ্চারিত হয়েছে। সেঙ্গোল হল কর্তৃত্ব ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক, এবং এটি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেহেরুকে তার ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেওয়ার উপায় হিসেবে প্রদান করা হয়েছিল।
গঠন ঃ
কর্ণাটকের পাট্টডাকলের বিরূপাক্ষ মন্দির 7 ম-অষ্টম শতাব্দীতে চালুক্য সাম্রাজ্যের সেঙ্গোল ভগবান শিবের হাতে। |
আধুনিক ভারতে সেঙ্গোলের ব্যবহার ঃ
ভারত ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা লাভ করে। ইংরেজ শাসকগণ ভারতীয়দের কাছে শাসন ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল। ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে নেহেরুর কাছে মাউন্টব্যাটনের জিজ্ঞাস্য ছিল, ভারত স্বাধীনতা অর্জন করলে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক কী হতে পারে। নেহেরু বিষয়টি নিয়ে দেশের শেষ গভর্নর জেনারেল সি. রাজাগোপালাচারীর সঙ্গে আলোচনা করেন।
সি. রাজাগোপালাচারী তামিল পরিবারের সন্তান হওয়ায়, তিনি নেহেরুকে তামিলনাড়ুর রাজপরিবারের ঐতিহ্যের বিষয়ে বলেন, এবং জানান, প্রথা অনুযায়ী, রাজপরিবারের নতুন রাজার অভিষেকের সময় হাতে রাজদণ্ড তুলে দেওয়া হয়। এই প্রথার সূত্রপাত চোল রাজাদের শাসনকাল থেকে হয়েছিল। রাজাগোপালাচারী নেহেরুকে ব্রিটিশদের হাত থেকে রাজদণ্ড নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
নেহেরু ঐতিহাসিক রাজদণ্ডটি জোগাড় করার গুরুভার রাজাগোপালাচারীকেই প্রদান করেছিলেন। রাজাগোপালাচারী দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, এবং রাজদণ্ডটি তৈরির জন্য তামিলনাড়ুর মঠ ‘তিরুভাদুথুরাই আথিনাম’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মঠের তৎকালীন গুরু রাজদণ্ড তৈরি করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিরুভাদুথুরাই আদিনাম মঠ আবার সেই রাজদণ্ড তৈরির দায়িত্ব তৎকালীন মাদ্রাজের এক প্রখ্যাত জহুরি ভুম্মিডি বঙ্গারু চেট্টির হাতে তুলে দিয়েছিল। বঙ্গারু সেই সোনার রাজদণ্ড তৈরি করেছিলেন।
রাজদণ্ড সেঙ্গোল তৈরি করার পর বঙ্গারু সেই রাজদণ্ড মঠের কাছে হস্তান্তর করেন। মঠের এক প্রবীণ পুরোহিত রাজদণ্ডটি মাউন্টব্যাটনের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এর পর রাজদণ্ডটি মাউন্টব্যাটনের থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। রাজদণ্ড সেঙ্গোলে গঙ্গাজল ছিটিয়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট মধ্যরাতের মিনিট পনেরো আগে নেহেরুর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। নেহেরুর রাজদণ্ড গ্রহণ করার মুহূর্তের কথা মাথায় রেখে একটি বিশেষ স্তোত্র রচনা করা হয়েছিল, এবং নির্দিষ্ট সময়ে স্তোত্রটি পরিবেশিত হয়েছিল।
সেঙ্গোল প্রয়াগরাজের একটি জাদুঘরে নেহেরুর হাঁটার লাঠি হিসাবে সংরক্ষিত ছিল। সেখান থেকে এটিকে ২০২৩ সালের ২৮ মে নতুন সংসদ ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে। ২৮ মে ২০২৩-এ নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন সংসদ ভবনে ঐতিহাসিক ও পবিত্র সেঙ্গোল প্রতিষ্ঠা করেছেন।