হিন্দু ধর্মে মকর সংক্রান্তি একটি অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। বৈদিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, যখন সূর্য ধনু রাশি থেকে বেরিয়ে মকর রাশিতে প্রবেশ করে, তখন এই শুভ দিনটি আসে। মাঘ মাসের শেষ দিনে পালিত এই তিথির সঙ্গে কুম্ভ মেলা ও গঙ্গাস্নানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
কুম্ভমেলায় অংশগ্রহণ করা নাগা সন্ন্যাসীর দল |
কুম্ভ মেলা ও গঙ্গাস্নান:
কুম্ভ মেলা হল হিন্দু ধর্মের একটি বিশাল তীর্থযাত্রা ও উৎসব। প্রতি ৪ বছর অন্তর এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। হরিদ্বার ও প্রয়াগে প্রতি ৬ বছর অন্তর অর্ধকুম্ভ এবং প্রতি ১২ বছর অন্তর প্রয়াগ, হরিদ্বার, উজ্জয়িনী ও নাসিকে পূর্ণকুম্ভ আয়োজিত হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এই পুণ্যলগ্নে গঙ্গায় স্নান করলে পাপমোচন হয়। বিশেষ করে প্রয়াগের ত্রিবেণী সঙ্গমে এই স্নানকে শাহী স্নান বলা হয়।
প্রয়াগরাজের গুরুত্ব:
প্রশ্ন জাগতে পারে, কেন কুম্ভস্নানের সঙ্গে প্রয়াগরাজের এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক? এর পেছনে রয়েছে একটি পৌরাণিক কাহিনী। সমুদ্রমন্থনের সময় দেবতারা অমৃতকুম্ভ লাভ করেন। অমৃত হাতছাড়া করতে না চাইয়ে দেবতারা ইন্দ্রপুত্র জয়ন্তকে এই কুম্ভ নিয়ে পালিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। পালানোর পথে জয়ন্ত হরিদ্বার, প্রয়াগ, নাসিক ও উজ্জয়িনীতে বিশ্রাম নিয়েছিলেন এবং কুম্ভটি সেখানে রেখেছিলেন। এই স্থানগুলিতে কয়েক ফোঁটা অমৃত পড়ে যাওয়ায় এই নদীগুলো পবিত্র হয়ে ওঠে। তাই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এই নদীগুলিতে স্নান করলে মোক্ষলাভ হয়।
বিশেষ করে প্রয়াগের ত্রিবেণী সঙ্গমে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদীর মিলন ঘটে। তাই এই স্থানকে অত্যন্ত পবিত্র মনে করা হয়। মকর সংক্রান্তির দিন এই ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান করলে সকল পাপ ধুয়ে যায় এবং মোক্ষলাভ হয় বলে বিশ্বাস করা হয়।
সারসংক্ষেপ:
মকর সংক্রান্তি ও কুম্ভ মেলা হিন্দু ধর্মের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে কুম্ভস্নানের পেছনে রয়েছে একটি গভীর পৌরাণিক কাহিনী। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে লক্ষ লক্ষ ভক্ত ধর্মীয় মিলন ও আধ্যাত্মিক উন্নতির সুযোগ পান।